বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

যে শহরে কেউ থাকে না

যে শহরে কেউ থাকে না

বিশ্বে এমন অনেক শহর বা জায়গা রয়েছে যেখানে একসময় বহু মানুষের ভিড় থাকলেও এখন সেগুলো পরিত্যক্ত। একসময় প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ থাকলেও বর্তমানে শহরগুলোতে শুধুই শূন্যতা, জনমানবহীনতা বিরাজ করছে। কেন এই শহরগুলো এখন পরিত্যক্ত? কেনই বা সেগুলো বসবাস অযোগ্য? একটি স্থান পরিত্যক্ত হওয়ার পেছনে নানা কারণ বা ঘটনা থাকতে পারে। আমরা জানি, যুদ্ধের সময় বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। অনেক স্থানে আবার পারমাণবিক বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানোর ফলে তা বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়ে। তাহলে জেনে নেওয়া যাক বিশ্বের এরকম কিছু পরিত্যক্ত জায়গার কথা ও এর পেছনে থাকা কারণগুলো...

 

চেরনোবিল বিপর্যয়ের পরই শহরটি পরিত্যক্ত ও জনশূন্য হয়ে পড়ে

সময়কাল : ১৯৮৬ সাল

পরিত্যক্ত শহরের কথা বললে প্রথমেই চলে আসবে ইউক্রেনের প্রিপেয়াত। কেননা, পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বকালের সবচেয়ে খারাপ মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ের মধ্যে একটি হলো- ১৯৮৬ সালের চেরনোবিল পারমাণবিক দুর্ঘটনা। যা জাপানের হিরোশিমা-নাগাসাকির চেয়েও কয়েক শ গুণ ভয়াবহ বলে বিবেচিত হয়। মূলত ১৯৭০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন চেরনোবিল নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টকে সমর্থন করার পরই পৃথিবীর নবম নিউক্লিয়ার শহর হিসেবে ধরা হয়। ১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল বিকাল পর্যন্ত এই শহরের জনসংখ্যা ছিল ৪৯ হাজারের বেশি। কিন্তু ওই দিন বিকালে চেরনোবিল দুর্ঘটনার পরই শহরটি পরিত্যক্ত ও জনশূন্য হয়ে পড়ে। কারণ- সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ইউক্রেনে অবস্থিত চেরনোবিল পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পরীক্ষা চালানোর সময় ভয়াবহ বিস্ফোরণ। পর পর দুটি বিস্ফোরণে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে চেরনোবিল। মুহূর্তেই নিভে যায় ৩১টি প্রাণ এবং ২৩৭ জন তীব্র বিকিরণ বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। দুর্ঘটনার সূত্রপাত চতুর্থ পারমাণবিক চুল্লিকে কেন্দ্র করে। পারমাণবিক বিক্রিয়ায় কয়েক কিলোমিটার এলাকায় দূষণ ছড়িয়ে পড়ে। কয়েক লাখ মানুষকে সেখান থেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। তখন থেকেই পরমাণু বিকিরণজনিত নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন আশপাশের বাসিন্দারা; যা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। তেজস্ক্রিয়-বিকিরণজনিত নানা রোগের পাশাপাশি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১ লাখ ১৫ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারায়। যদিও এখন ধীরে ধীরে শহরে রেডিয়েশন কমে গেছে। অনেকে এখানে বেড়াতে এলেও স্থায়ীভাবে কেউ বসবাস করেন না।

 

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংস হয়ে পড়ে অর্ধেক শহর

সময়কাল : ১৯১২ সাল

আমেরিকার অন্যতম পরিত্যক্ত শহরের নাম গার্নেট। এক সময়ের গোল্ডমাইন সমন্বিত শহর। এই অঞ্চলে পাওয়া মূল্যবান রুবি রঙের পাথরের কারণেই শহরের নামকরণ করা হয়েছিল। ১৮০০-এর দশকে খনি শ্রমিকরা এই শহরে বসবাস করতে শুরু করে। কারণ আশপাশের পর্বতগুলো সোনায় সমৃদ্ধ। ছিল স্কুল, মদের বার। এমনকি অপরাধের হারও ছিল অনেক কম। ব্যাপকভাবে হতো ব্যবসা বাণিজ্যও। কেননা বাউডি হাউস, মিসৌলা এবং ডিয়ার লজগুলো যথেষ্ট কাছাকাছি ছিল। মূল কথা, ১৮৬০ সাল পর্যন্ত এখানেও ছিল মানুষের বাস। পরে ১৮৭০ সালের মধ্যে বেশির ভাগ খনির কাজ আর লাভের মুখ দেখেনি। যদিও মতান্তরে অনেকে বলেন, ১৮৯৮ সাল পর্যন্তও এখানে প্রায় ১ হাজার মানুষ বসবাস করত। তখন শহরটির নাম ছিল মিচেলো। কিন্তু সোনার খনির ব্যবসা বন্ধ হতেই গার্নেটের ঔজ্জ্বল্য ফিকে হতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে পরিত্যক্ত হতে শুরু করে। সবাই এই শহর ছেড়ে চলে যান। ১৯১২ সালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় অর্ধেক শহর ধ্বংস হয়ে যায়। বর্তমানে এটিও একটি পর্যটন কেন্দ্র, তবে পরিত্যক্ত।

 

আন্দোলন-ধর্মঘটে আয় বন্ধ; জনশূন্য হয়ে পড়ে

সময়কাল : ১৯২২ সাল

ব্যাঙ্কহেড হলো ব্যানফের কাছে একটি ছোট শহর। যা কানাডার রকি পর্বতমালায় অবস্থিত। রাজকীয় ব্যানফ ন্যাশনাল পার্কে অবস্থিত হওয়ায় অনেক দৃষ্টিনন্দন পাহাড় দেখতে পাওয়া যায়। প্রায় এক শতাব্দী আগে পরিত্যক্ত এই শহরটি ১৯০৩ সালে আলবার্টাজুড়ে কয়লা খনির মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কথিত আছে, শহরের উত্থানকালে এখানে ১ হাজারেরও কম লোকের বসবাস ছিল। তবে এই শহরে একটি কয়লার খনি হওয়ার পরে সেখানে প্রায় ১ হাজার লোক কাজ করতেন। তারা সবাই আধুনিক নাগরিক সুবিধা উপভোগ করেছিল। যেমন- বিদ্যুৎ, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং পৌরসভার পানি সরবরাহ সুবিধা। যা ব্যানফ কিংবা ক্যানমোরের মতো পার্শ্ববর্তী শহরগুলোতেও তখনো ছিল না। ১৯২২ সালে শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে খনিটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে এর অনেক কাজ এবং ভবন সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। তারপর থেকে শহরটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। আজও ভবন, সিঁড়ি এবং খনির সরঞ্জামগুলো ব্যাঙ্কহেডে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।

 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর গ্রিস-তুরস্কের সংঘাতে নগরী খালি হয়ে যায়

সময়কাল : ১৯১৯-১৯২২ সাল

চৌদ্দ শতকে আনাতোলিয়ান মুসলমান ও অর্থোডক্স খ্রিস্টানদের বসবাসস্থল ছিল এটি। টরাস পর্বতে অবস্থিত এ শহরে তারা বেশ সৌহার্দপূর্ণভাবেই বসবাস করত। পরবর্তী সময়ে গ্রিস-তুরস্ক যুদ্ধের বলি হয় এখানকার সম্প্রীতি। যাই হোক, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে তিক্ত সংঘাতের কথা বলে গ্রিস এবং তুরস্ক বিস্তৃত অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণের সংঘাতে নেমেছিল। যা ফলাফল হিসেবে লাখ লাখ লোক প্রাণভয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। ১৯২৩ সালে রক্তপাত বন্ধ করার জন্য দুই দেশের সরকার জনসংখ্যা বিনিময়ে সম্মত হয়। এই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের গ্রিসে আর মুসলমানদের তুরস্কে সরিয়ে নেওয়া হয়। তাই অনেকে নিজেদের পৈতৃক ভিটায় ফিরতে পারেনি। তখন থেকে জমজমাট কায়াকোয় মৃত নগরী হয়ে ওঠে। বর্তমানে এখানে ৫০০-এর মতো দালান এবং কয়েকটি চার্চের ধ্বংসাবশেষ টিকে আছে; যা ইউনেস্কোর জাদুঘর এবং ‘বিশ্ব বন্ধুত্ব এবং শান্তির গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত।

 

চীনের মাছ ধরার একটি বিস্তৃত গ্রাম, যা প্রকৃতি গ্রাস করে নিয়েছে

সময়কাল : ১৯৯০ সাল

অনেকটা রূপকথার গল্পের মতোই গ্রাম হাউতুওয়ান। যা চীনের পূর্ব উপকূলের শেংশান দ্বীপপুঞ্জের একটি অংশ। একসময় হাউতুওয়ান একটি সমৃদ্ধিশালী মাছ ধরার গ্রাম হিসেবে বেশ পরিচিত ছিল। যেখানে ১৯৮০-এর দশকে ৩ হাজারেরও বেশি বাসিন্দার বসবাস ছিল। যারা সমুদ্রে মাছ আহরণ করে নিজেদের জীবিকানির্বাহ করত। ২০০০ সালে চীনের সরকার গ্রামটিকে জনশূন্য পরিত্যক্ত নগরী হিসেবে ঘোষণা করে। তবে পরিত্যক্ত গ্রামটির আগের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধিশালী। একসময় সাংহাইয়ের কাছাকাছি থাকা শেংশান দ্বীপের হাউতুওয়ান গ্রামটি বেশ প্রাণবন্ত ছিল। স্থানীয়রা সমুদ্রে মাছধরাকে নিজেদের আয়ের উৎস হিসেবে বেছে নেয়। কিন্তু ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে এলাকাটি বেশ দুর্গমতার কারণে স্থানীয়দের খাবার সংগ্রহ বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। একসময় হাউতুওয়ানের বাসিন্দাদের জীবনধারণের সব মৌলিক উপাদানগুলো অর্জন অসম্ভব হয়ে পড়ে। ঠিক এ কারণে ধীরে ধীরে স্থানীয়দের অনেকেই জীবিকার তাগিদে অন্যত্র পাড়ি জমাতে থাকেন। ফলে ২০০০ সালের মধ্যে গোটা গ্রামটি জনশূন্য হয়ে পড়ে। পাহাড়ের বুকে গড়ে ওঠা নগরীকে ধীরে ধীরে প্রকৃতি গ্রাস করে নিতে থাকে। হাউতুওয়ানের প্রত্যেকটি বাড়ি এখন সবুজের চাদরে আবৃত। যা অঞ্চলটিকে অপূর্ব এক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

 

সোনার ভান্ডার নিঃশেষ হয়ে গেলে ধীরে ধীরে শহরটি খালি হয়ে যায়

সময়কাল : ১৯১০ সাল

উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ক্যালিফোর্নিয়ার বোডি নগরীতে সোনার খনির সন্ধান মেলে। এর আগে, একদল গবেষক সেখানে সোনার খনির খোঁজে গবেষণা করছিল। স্থানীয়দের কাছে বডি শহরতলি ব্লাফ হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৮৬১ সালে এই শহরে একটি কারখানা খোলা হয়েছিল এবং বডি নামক ছোট্ট শহরটি বড় হতে শুরু করে। সেই থেকে লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে এই শহর; যা শহরটিকে একটি সমৃদ্ধিশালী নগরীতে রূপ দেয়। গবেষকদের তথ্য বলছে, ছোট্ট সুন্দর এই শহরটিতে একসময় ৫ থেকে ৭ হাজার নাগরিক বসবাস করত। যেখানে ১৮৭০-এর দশক থেকে বছরে লাখ লাখ ডলার মূল্যের সোনা উৎপাদন হতো। প্রাথমিকভাবে বডি সোনার খনিগুলোর সমৃদ্ধি সত্ত্বেও ১৮৭০-এর দশকে মজুত কমতে থাকে। ১৮৭৫ সালে বাঙ্কার হিল শহরের গুরুত্বপূর্ণ খনিগুলো ধসে পড়ে। যা বডি শহরের বাসিন্দাদের ভাগ্য খুলে দেয় এবং তারা সোনার সরবরাহ বাড়াতে থাকে। ১৮৭৭-১৮৮২ সালের মধ্যে বডি প্রায় ৩৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের সোনা ও রুপা রপ্তানি করেছিল। শহরটি গড়ে ওঠার মাত্র দুই দশক পরে লোকেরা ধনী হওয়ার জন্য বডি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে থাকে। ১৯ শতকে অঞ্চলটির খনিগুলোর মজুত কমতে থাকে। পাশাপাশি স্থানীয়দের আয়ের উৎসও কমে আসে। ১৯৪০-এর দশকে এটি সম্পূর্ণরূপে পরিত্যক্ত হয়ে যায়।

 

ভয়াবহ ভূমিধসের ফলে একসময় গ্রামটি জনশূন্য হয়ে পড়ে

সময়কাল : ১৯৫৬ সাল

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, নামিবিয়ার কোলমানস্কোপ মরুভূমির রাজ্যে যেন এক জনশূন্য ভূতুড়ে নগরী। নামিবিয়ার লেডারিজ বন্দরের কাছাকাছি এই শহরটি একসময়ের সমৃদ্ধ শহর। গবেষকদের তথ্যমতে, পশ্চিম আফ্রিকার নামিব মরুভূমিতে অবস্থিত কোলমানস্কোপ একসময় হীরার খনির জন্য বিখ্যাত ছিল। জাকারিয়াস লেওয়ালা নামক স্থানীয় এক কর্মী ১৯০৮ সালে এখানে হীরা আবিষ্কার করার পর শহরে মানুষের বসবাস বাড়তে থাকে। এরপর জীবনের প্রয়োজনে সেখানে ধীরে ধীরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, যোগাযোগব্যবস্থা- সবই গড়ে তোলা হলো। জার্মান নির্মাণশৈলীতে তৈরি এ শহরটিতে বলরুম, থিয়েটার ছাড়াও ছিল আফ্রিকার প্রথম ট্রাম সিস্টেম। কিন্তু যে-ই না খনির হীরা ফুরিয়ে যেতে লাগল ১৯৩০ সালের দিকে, অমনি তারা পাততাড়ি গুটিয়ে চলল দক্ষিণে অরেঞ্জ নদীর পানে। কেননা সেখানে ছিল আরও বেশ কয়েকটি বিশাল হীরার খনি। অগত্যা জীবিকানির্বাহ কিংবা আয়ের উৎস হিসেবে সবাই সেখানে পাড়ি জমাতে থাকে। খনি শেষ হয়ে যাওয়ার পর শহরটির গুরুত্ব যেমন কমে যায়; তেমনি আশপাশের মরুভূমিও জেগে ওঠে। পরবর্তীতে ১৯৫০ সালের মাঝামাঝি সময়ে ভূতুড়ে শহরের বদনাম তৈরি হয় শহরটিকে ঘিরে। এরপরই তা নিয়ে ভয় পেতে শুরু করেন মানুষজন। ছাড়তে শুরু করেন শহর। ধীরে ধীরে পরিত্যক্ত হয়ে যায় শহরটি। এভাবে মানুষ কমতে কমতে ১৯৫৬ সালের দিকে পুরো এক পরিত্যক্ত নগরে পরিণত হলো কোলমানস্কোপ। কালক্রমে গোটা শহরটিকে গিলে ফেলে মরুভূমি। যদিও এখনো মরুভূমির মাঝেই সেই শহরের কিছু বাড়ির নান্দনিক সব সাজসজ্জা দেখতে পাওয়া যায়। আজকের বিশ্বের পর্যটকরা এখানে দেখতে আসেন কীভাবে একটা গোটা শহর মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে।

 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা গ্রামটিকে ভূতুড়ে করে তোলে

সময়কাল : ১৯৪৪ সাল

বিভীষিকাময় যুদ্ধের সাক্ষী হয়ে থাকা আরেকটি শহর ওরাদর-সুর-গ্লান। যা ফ্রান্সে অবস্থিত। এটি পশ্চিম-মধ্য ফ্রান্সের একটি গ্রাম। একসময় ফ্রান্সের এই গ্রামে ছিল অসংখ্য জেলেদের বসবাস। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা গ্রামটিকে একটি ভূতুড়ে গ্রামে পরিণত করে। নাৎসি পার্টির এসএস সংগঠনের সামরিক শাখা ‘ওয়াফেন এসএস’ দ্বারা ওই অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ হত্যা করে। ইতিহাসবিদদের তথ্যমতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি সৈন্যরা ৬৪২ জন শহরবাসীসহ পুরো শহরটিকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয়। পরে অবশ্য যুদ্ধকালীন নেতা চার্লস ডি গল পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেন, ওরাদর-সুর-গ্লানকে নাৎসি নিষ্ঠুরতার প্রমাণ হিসেবে মানুষের বসবাসের জন্য নিষিদ্ধ থাকবে। ১৯৪৪ সালের ১০ জুন থেকে জায়গাটি একরকম সুনসান পরিত্যক্ত এলাকায় পরিণত হয়েছে। প্রায় ৭০ বছর ধরে গ্রামটি খাঁ খাঁ করছে। শুধুমাত্র কয়েকটি পোড়া দালান এবং গাড়িগুলোই বর্তমানে শহরটির চিহ্ন। ১৯৯৯ সালে সেখানে একটি স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ করা হয়।

 

শহরের অবস্থানই এই শহরের জনশূন্য হওয়ার মূল কারণ

সময়কাল : ১৯৯০ সাল

৫৪০ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ ইতালির এই ছোট্ট পাহাড়ি শহরটি গড়ে ওঠে। ইতালির সুদূর দক্ষিণে এটি অবস্থিত। দর্শনীয় এবং আর্কষণীয় স্থাপত্য থাকায় এটি বিশ্বের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন পরিত্যক্ত শহরগুলোর মধ্যে একটি। এই শহরের অবস্থানই এর পরিত্যক্ত হওয়ার মূল কারণ। বারবার ভূমিধস হওয়ায় স্থানীয়রা এখানে আর চাষাবাদ করতে পারছিল না। ১৯৬০ সালে পানি-পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য মাটি খুঁড়লে সেখানে ভূমিধস হয়। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা আর থাকতেও চাচ্ছিল না। ফলে শহর ছাড়তে শুরু করে লোকজন। ১৯৮০ সালে ইরপিনিয়া ভূমিকম্পে ক্র্যাকো নির্জন হয়ে পড়ে। ১৯৯০ সালে শহরটি একেবারে খালি হয়ে যায়। তারপর থেকে ভূতের শহরটি কেবল হাজার হাজার পর্যটকদেরই আকর্ষণ করেনি, এটি শুটিংয়ের জন্যও জনপ্রিয় স্থান হয়ে ওঠে। ২০০৮ সালে এখানে জেমস বন্ডের ‘কোয়ান্টাম অব সোলেস’-এর শুটিং হয়েছে।

 

কয়লার জোগান ফুরিয়ে এলে লোকেরা ধীরে ধীরে অন্যত্র চলে যায়

সময়কাল : ১৯৭৪ সাল

বিশ্বের ৫০৫টি জনমানবহীন দ্বীপের অন্যতম হাশিমা দ্বীপ। জাপানের দক্ষিণভাগে অবস্থিত এই দ্বীপ। দূর থেকে দেখলে মনে হয় সমুদ্রের মাঝে একটা সামরিক জাহাজ। যার দূরত্ব মূলত নাগাসাকি থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার। এই দ্বীপে একসময় কয়লা আবিষ্কার হয়। তারও প্রায় ৮০ বছর পর ১৮৮৬ সালে, সমুদ্রের নিচে খোঁজ মেলে কয়লার খনির। ১৯৫৯ সাল পর্যন্তও এই দ্বীপে বাস করতেন ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। কিন্তু কয়লার জোগান ফুরিয়ে আসতেই ১৯৭৪ সাল থেকে ধীরে ধীরে ফাঁকা হতে শুরু করে এই দ্বীপ। ২০০০ সাল পর্যন্ত হাশিমা দ্বীপ পরিত্যক্ত অবস্থাতেই ছিল। দ্বীপটি ভূতের দ্বীপ নামে পরিচিতি পায়। কিন্তু এরপর জাপান সরকার এই দ্বীপের কিছু বাড়ি মেরামত করলে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ে। ২০১৫ সাল থেকে এটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর