শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা
দিনাজপুরে নিহত তিনজন

দুপুরে মাকে বলল, নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছি, রাতে মৃত্যুর খবর

দিনাজপুর প্রতিনিধি

দুপুরে মাকে বলল, নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছি, রাতে মৃত্যুর খবর

দিনাজপুরের মেধাবী ও হাসোজ্জ্বল রুদ্র সেন সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থী ছিলেন। কোটা আন্দোলনের সময় ১৮ জুলাই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। সে সময় পালাতে গিয়ে তিনি পানিতে ডুবে মারা যান। ‘মা তুমি চিন্তা কোরো না, আমি নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছি’-

ঘটনার দিন দুপুরে মায়ের সঙ্গে ছিল এটাই রুদ্র সেনের শেষ কথা। এরপর রাত সাড়ে ৮টায় ফোন করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে রুদ্র সেনের এক বন্ধু ফোন করে জানান, রুদ্র পানিতে ডুবে মারা গেছেন। নিহত রুদ্র সেন শাবিপ্রবির কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড পলিমার সায়েন্স বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। রুদ্র সেনের বোন সুস্মিতা সেন বলেন, কোটা আন্দোলন সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সবাই যাচ্ছিল। আন্দোলনে অংশগ্রহণ করছিল, তাই তার (রুদ্র সেন) মনে হয়েছিল আমিও যাই। সে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। ১৮ জুলাই দুপুরে ক্যাম্পাসে ধাওয়া খেয়ে সে পড়ে যায়। এতে সে হাঁটুতে আঘাত পায়। পরে যে মেসে ভাড়া থাকত সেখানে ফিরে আসে। সহপাঠীরা তার আঘাত পাওয়া স্থানে ড্রেসিং করে দেয়। তাদের জন্য ওই বাড়িটি নিরাপদ হবে না। তাই বিকেলে আবারও সংঘর্ষ শুরু হলে চার বন্ধু মিলে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করে কলাগাছের তৈরি ভেলায় বাড়ির পেছনে সুরমা আবাসিক এলাকায় খাল পার হচ্ছিল। খালের মাঝামাঝি গিয়ে ভেলাটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। এতে তারা চার বন্ধু গভীর পানিতে পড়ে যায়। অন্যরা সাঁতার জানলেও আমার ভাই রুদ্র সেন সাঁতার জানত না। তা ছাড়া পায়ের আঘাতের কারণে খালের পানিতে ডুবে যায় সে। উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরিবারের সদস্যদের মুখে একটু হাসি ও সচ্ছলতা ফেরানোর জন্য ঢাকার আশুলিয়ায় কাজের সন্ধানে গিয়ে গার্মেন্টে কাজ নেন সুমন পাটোয়ারী। ৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি
গুলিতে নিহত সুমনের পরিবারের শোক কাটছেই না : ৫ আগস্ট বের হলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সুমন পাটোয়ারী (২০)। সন্তানকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ পিতা-মাতাসহ স্বজনরা। সুমনের পিতা মো. ওমর ফারুক জানান, ছেলে আমাদের পরিবারের একটু সুখের আশায় আশুলিয়ায় কাজের সন্ধানে যায়। কিন্তু সেই সুখ আর আমাদের কপালে সইলো না। সে আমাদের মাঝে অক্ষত অবস্থায় বাড়িতে ফিরল না। এলো তার লাশ।

আহত শিক্ষার্থীর মৃত্যু : দিনাজপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত রাহুল ইসলাম নামের কলেজ শিক্ষার্থী চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে। গত ৪ আগস্ট বিকেলে দিনাজপুর শহরের কাচারি এলাকায় পুলিশের ছোড়া টিয়ার শেলের গ্যাস ও ছররা গুলিতে আহত হন রাহুল।

তাকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৯ আগস্ট সন্ধ্যায় রাহুলের মৃত্যু হয়।

সর্বশেষ খবর