শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

বুলেটে চুরমার স্বপ্ন

মিছিলের কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয় সাকিব

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

বুলেটে চুরমার স্বপ্ন
সংসারে সচ্ছলতা আনতে বিদেশে যেতে চেয়েছিলেন সাকিব। প্রস্তুতিও শুরু করেছিলেন। কিন্তু একটা বুলেট সব স্বপ্ন চুরমার করে দিল...

রাজশাহী মহানগরীর রানীনগর এলাকার সাকিব আনজুম (২৬)। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সময় বিয়ে করেন। বাবার কসমেটিকস ব্যবসার দোকানে বসে ঠিকই চলছিল সংসার। আরেকটু স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে আসতে যেতে চেয়েছিলেন বিদেশে। কিন্তু ৫ আগস্টের একটা বুলেট চুরমার করে দেয় সব স্বপ্ন। বাবা মাইনুল হক জানান, তার তিন ছেলে শুরু থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জড়িত ছিল। বড় ছেলে সাকিব, মেজো ছেলে সজীব ও ছোট ছেলে মাদরাসাপড়ুয়া আসিফ প্রতিদিনই যেত বিক্ষোভে। ৫ আগস্ট মিছিলের কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। দুপুরে হঠাৎ গোলাগুলির বিকট শব্দ। বড় ছেলেকে তার মোবাইলে কল দেওয়া হয়, রিসিভ করে না। মেজো ছেলেকে কল দেওয়া হয়, সেও রিসিভ করে না। কিছুক্ষণ পর স্ত্রী রোকেয়া খাতুনকে সঙ্গে নিয়ে ছেলেদের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন মাইনুল। রিকশা নিয়ে যেতেই ছোট ছেলে ছুটে এসে খবর দেয় অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। মনটা আরও উতলা হয়ে ওঠে। মাইনুল বলেন, বিকেলে তার বড় ছেলের মোবাইল থেকে একজন কল করে জানায় সাকিব আহত হয়েছে। শাহ মখদুম কলেজের কাছে আসেন। সেখানে গিয়ে দেখেন কেউ নেই। এরপর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান। সেখানে অপারেশন থিয়েটার থেকে একজন একজন করে বের করে বিছানায় দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সাকিব তো নেই। চিকিৎসকরা তাকে জানান, গুরুতর আহত একজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। মাইনুলের মনে হয়, ওইটাই মনে হয় তার ছেলে। কিন্তু মেজো ছেলে সজীবের ফোন পান। রিসিভ করে জানলেন, তার বড় ছেলে আর নেই। লাশ পাওয়া গেছে। এরপর কান্নায় ভেঙে পড়েন মাইনুল। মাইনুল হক জানান, তিন বছর আগে বড় ছেলে সাকিব ভালোবেসে বিয়ে করেছে নিশাত ছালছাবিলকে। বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স থেকে গত বছর পাস করেছে। একজনের আয়ের সংসারে আরেকটু সচ্ছলতা ফেরাতে যেতে চেয়েছিলেন বিদেশে। প্রস্তুতিও চলছিল। কিন্তু একটা বুলেটে সব স্বপ্ন চুরমার। বাড়ির নারী সদস্যরা বাইরের লোকজনের সামনে আসেন না। তারপরও কথা বলার চেষ্টা করা হয় নিহত সাকিবের স্ত্রী নিশাত ছালছাবিলের সঙ্গে। কিন্তু বাকরুদ্ধ নিশাত। আর সাকিবের মা রোকেয়া খাতুন এখন সন্তান হারানোর শোকে পাগলপ্রায়। রানীনগর এলাকাটিও যেন এক শোকপুরী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর