শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

ছেলের কবরের দিকে তাকিয়ে দিন কাটছে বাবার

গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরেও সজল তার মাকে ফোন করে বলেছে, আমি বেঁচে ফিরতে না পারলেও আমার মৃতদেহটা নিয়ে যেও...

সাইফুল মিলন, গাইবান্ধা

ছেলের কবরের দিকে তাকিয়ে দিন কাটছে বাবার

সজলের বাবা ঘুরেফিরে ছেলের কবরের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকেন আর কাঁদেন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকার সাভারে পুলিশের গুলিতে নিহত শিক্ষার্থী সাজ্জাত হোসেন সজলের কবরের দিকে তাকিয়ে থেকে দিন কাটছে বাবা খলিলুর রহমানের। ঘুরেফিরে ছেলের কবরের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকেন সব সময়। নিহত সাজ্জাত হোসেন সজলের বাড়ি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামে। সজল ওই গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে। তিনি ঢাকার সিটি ইউনিভার্সিটিতে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। গত ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে সজল নিহত হন। ৭ আগস্ট দুপুরে উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সজলের বাবা খলিলুর রহমান (৪৮) বলেন, অনেক স্বপ্ন ছিল ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার বানাব। আমাদের সেই স্বপ্ন ভেঙে গেল। স্বপ্ন ছিল সজল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে সংসারের হাল ধরবে। সে সুখের আর দেখা পেলাম না। স্বপ্ন আমাদের স্বপ্নই রয়ে গেল। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরেও সজল তার মাকে ফোন করে বলেছে, আমি বেঁচে ফিরতে না পারলেও আমার মৃতদেহটা নিয়ে যেও। খলিলুর রহমানের দাবি সজলকে যেন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে নিহত হয় সজল। এরপর সজলসহ আরও কয়েকজনের মরদেহ পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়। পরে উত্তেজিত জনতা পুলিশের ওই গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র দেখে সজলের মরদেহ শনাক্ত করা হয়। এরপর আগুনে ঝলসে যাওয়া মরদেহ উদ্ধার করে পরিবার। স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, সজলের বাবা খলিলুর রহমান আশুলিয়া জামগড়া এলাকার শান্তা হোলডিংস নামের একটি বেসরকারি কোম্পানিতে রোপেস্ট অপারেটর ও তার মা শাহিনা বেগম ওই এলাকার নারী ও শিশু হাসপাতালে ক্লিনারের কাজ করেন। দুজনের সেই আয় থেকেই ছেলে সজল ও মেয়ে খুশির লেখাপড়ার খরচ জোগাতেন। ছেলেকে নিয়ে তাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। সজলের দাদি আছাতুন বেওয়া (৭৫) বলেন, ‘ছেলে আমার (সজলের বাবা) ঘুরেফিরে ওই কবরের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকে, আর কাঁদে। তাকে বোঝানোর মতো শক্তি হামার নাই বাপো।’

সর্বশেষ খবর