শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

আন্দোলন সফল হয়েছে, কিন্তু আমার বুকের মানিক হারিয়ে গেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

আন্দোলন সফল হয়েছে, কিন্তু আমার বুকের মানিক হারিয়ে গেছে

পড়ার টেবিলে ছেলের স্মৃতি হাতড়াচ্ছেন জাবিরের বাবা-মা। ইনসেটে ইমতিয়াজ আহমেদ জাবির

‘কোটা আন্দোলন সফল হয়েছে। সরকারেরও পতন হয়েছে। কিন্তু আমার বুকের মানিক হারিয়ে গেছে’, পুলিশের গুলিতে একমাত্র ছেলে ইমতিয়াজ আহমেদ জাবিরকে হারিয়ে দিন-রাত এভাবেই বিলাপ করছেন জাবিরের মা শিরিনা আক্তার। কখনো ছেলের পড়ার টেবিলে, কখনো-বা খাবার টেবিলে বসে অঝোরে কেঁদেই চলেছেন। পুত্রশোকে নির্বাক বাবা নওশের আলীও। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার হাজিরবাগ ইউনিয়নের দেউলি গ্রাম। এই গ্রামের নওশের আলী ও শিরিনা আক্তারের একমাত্র ছেলে জাবির। এসএসসি ও এইচএসসিতে মেধার সাক্ষর রাখা জাবির সাউথ-ইস্ট ইউনিভার্সিটির বিবিএ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। থাকতেন রাজধানীর বনশ্রী এলাকার একটি মেসে। জাবিরের পিতা নওশের আলীর একটা মুরগির খামার রয়েছে। যার মাধ্যমে সংসার মোটামুটি চলত সংসার। জাবিরের একমাত্র বোন রোজিনা আক্তার এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্রী। বাবা নওশের আলী বলেন, কোরবানির ঈদে বাড়ি এসেছিল জাবির। ঈদের পর ঢাকায় চলে যায়। এরপর আর বাড়ি আসেনি। মৃত্যুর পর তার লাশটাও বাড়ির উঠানে নিতে দেয়নি। প্রশাসনের চাপ ছিল। ২৬ জুলাই রাত ১১টায় কবরস্থানের পাশেই কোনো রকমে জানাজা পড়া হয়। এরপর সঙ্গে সঙ্গে কবর দিয়ে দেওয়া হয়। জাবিরের মামা ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে মহাখালীতে অংশ নেয় জাবির। এ দিন তার শরীরে বেশ কয়েকটি রাবার বুলেট লাগে। কিন্তু এ কথা কাউকে সে বলেনি। ওই অবস্থাতেই পরদিন রামপুরায় আন্দোলনে অংশ নেয়। সেখানে বেলা আড়াইটার দিকে পুলিশ গুলি চালায়। জাবিরের চোখের সামনে পুলিশের গুলিতে আন্দোলনরত দুইজনের মৃত্যু হয়। ওই দুইজনকে উদ্ধার করতে গিয়েই পুলিশের ছোড়া বুলেটে গুরুতর আহত হয় জাবির। ১৯ জুলাই শুক্রবার বিকেলে কেউ একজন তার কাছে ফোন করে জানায়, জাবির মুগদা হাসপাতালে ভর্তি, তার জন্য দ্রুত রক্ত লাগবে। পরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে এক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করা হয়। আমরাও ঢাকায় পৌঁছে রাতেই জাবিরকে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করি। শনিবার জাবিরের অবস্থা একটু ভালো হয়। পরিবারের সবার সঙ্গে কথাও বলে। কিন্তু হঠাৎই তার কিডনিতে সমস্যা দেখা দেয়। ডাক্তাররা বলেন, গুলিতে কিডনির একটি শিরা বন্ধ হয়ে গেছে। ডাক্তাররা পা কেটে ফেলার পরামর্শ দেন। ২২ জুলাই জাবিরকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। কিন্তু এ দিন ডাক্তাররা বলেন, পা কাটার প্রয়োজন নেই। বৃহস্পতিবার জাবিরকে ডায়ালাইসিস করার জন্য নেওয়া হয়। কিন্তু আধা ঘণ্টা পর ডায়ালাইসিস বন্ধ হয়ে যায়। নেওয়া হয় আইসিইউতে। বিফলে যায় সব চেষ্টা। ২৬ জুলাই শুক্রবার বিকাল ৪টায় শেষবারের মতো নিঃশ্বাস নেয় জাবির।

সর্বশেষ খবর