রবিবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

আমার স্বামী তো কোনো রাজনীতি করে নাই, তারে মারল কেন

নিহত ফারুকের স্ত্রী সন্ধ্যা বেগম বলেন, ‘আমাদের আর কেউ নাই। তার উপার্জনেই তো সংসার চলত। পুলাপানের লেখাপড়া চলত, এখন কেমনে চলব?’

জামালপুর প্রতিনিধি

আমার স্বামী তো কোনো রাজনীতি করে নাই, তারে মারল কেন

উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে দিশাহারা ফারুকের পরিবার। (ডানে) নিহত ফারুক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কারফিউয়ের সময় পুলিশের গুলিতে মারা যান জামালপুরের দুজন। তাদেরই একজন ফারুক। ১৯ জুলাই সাভারে পুলিশের গুলিতে তার মৃত্যু হয়। একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে দিশাহারা ফারুকের পরিবার। নিহত ফারুক (৪৫) জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের ডেঙ্গারগড় গ্রামের মৃত হায়দার আলীর ছেলে। ফারুকের স্ত্রী সন্ধ্যা বেগম জানান, ফারুক সাভারের রাজ্জাক কাঁচা বাজারের জনি মিয়ার মুরগির দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। ১৯ জুলাই দুপুরে তার ননদের কাছে মোবাইলে ফোন আসে। এ সময় তিনি পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। মোবাইলে শুনতে পান সাভার থেকে কেউ ফোন দিয়ে তার স্বামীর কথা বলছে। ননদকে জিজ্ঞেস করার পরও কিছু না বলায় সন্ধ্যা বেগম তার স্বামী যে দোকানে চাকরি করতেন সেই দোকানের মালিক জনিকে ফোন দিয়ে তার স্বামীর কথা জিজ্ঞেস করেন। জনি তাকে জানান, ১৯ জুলাই সকালে দোকানে যান ফারুক। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হলে পুলিশ মুরগির দোকানে ঢুকে পড়ে, তাকে আঘাত করে। ফারুক ভয়ে দৌড় দিলে পুলিশ তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। পরে স্থানীয়রা তাকে মুমূর্র্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফারুক মারা যান। তার লাশ জামালপুরে গ্রামের বাড়িতে এনে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। নিহত ফারুকের স্ত্রী সন্ধ্যা বেগম (৩৫) ছাড়াও মাহফুজ (১০) ও তাবাসুম (৬) নামে দুই সন্তান রয়েছে। স্থানীয় নূরানি মাদরাসায় পঞ্চম শ্রেণিতে মাহফুজ এবং প্রথম শ্রেণিতে পড়ে তাবাসুম। পরিবারের একমাত্র উপার্জক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে দিশাহারা পরিবারের সদস্যরা। অজানা অন্ধকার ভবিষ্যৎ নিয়ে দিন কাটছে তাদের। নিহত ফারুকের স্ত্রী সন্ধ্যা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী তো কোনো রাজনীতি করে নাই। দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজ করত, তারে কেন মারল। এখন আমাদের কী হবে। আমার স্বামী ছাড়া তো আমাদের আর কেউ নাই। তার উপার্জনেই তো সংসার চলত। পুলাপানের লেখাপড়া চলত, এখন কেমনে চলব? আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই। আমার সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব সরকারকেই নেওয়া লাগব।’ নিহত ফারুকের শিশু ছেলে মাহফুজ জানায়, ‘আমি এখন কাকে বাবা বলে ডাকব।’ ছয় বছরের তাবাসুম বলেন, ‘আমি সকালে বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলছি। বিকালে বাবা মারা গেছে।’

 

সর্বশেষ খবর