রবিবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

আমার ছেলেটা আর নাই, এখন কী নিয়ে বেঁচে থাকব

ইয়াসিনের লাশ গ্রামের বাড়িতে নিতে অ্যাম্বুলেন্স ব্যয়ও মেটাতে হয়েছে ধারকর্জ করে

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

আমার ছেলেটা আর নাই, এখন কী নিয়ে বেঁচে থাকব

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ২০ জুলাই ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হয় ইয়াসিন শেখ। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৫ জুলাই মারা যায় ১৭ বছরের ইয়াসিন। তার দরিদ্র পরিবারের পক্ষে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যয় মেটানো সম্ভব ছিল না। এমনকি মৃত্যুর পর দাফনের জন্য লাশ গ্রামের বাড়িতে নিতে অ্যাম্বুলেন্স ব্যয়ও মেটাতে হয়েছে ধারকর্জ করে। ইয়াসিন শেখের বাড়ি খুলনার রূপসা উপজেলার রহিমনগর গ্রামে। তিন বোন, এক ভাইয়ের সংসারে ইয়াসিন সবার ছোট। তার বাবা মারা গেছেন ১৫ বছর আগে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে মা মনজিলা বেগম হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন। কীভাবে সংসার চলবে জানেন না তিনি। নিহত ইয়াসিনের রূপসা রহিমনগরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জীর্ণশীর্ণ কুড়ে ঘরে তাদের বসবাস। মা মনজিলা বেগম ঢাকায় পরের বাড়িতে কাজ করেন। মনজিলা বেগম বলেন, অনেক চেষ্টা করে ছেলেরে মানুষ করেছি। আমি পরের বাড়িতে কাজ করছি। এখন আমার ছেলেটা আর নেই। এখন কী নিয়ে বেঁচে থাকব। দিনরাত কত কষ্ট করত। তার আয়ের টাকায় আমাদের ঘরবাড়া, সংসার চলত। এখন কীভাবে চলবে আমাদের। মনজিলা বেগম বলেন, ‘ছেলে গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর শুনে তাকে নিয়ে হাসপাতালে যাব এমন টাকাও ছিল না। গুলি লাগার পর কয়েকটা ছেলে যাত্রাবাড়ী মাতুয়াইলে ভাড়া বাসায় এসে ঘটনা জানায়। সংঘর্ষের মধ্যে ওইখানে কেউ যেতেও চাচ্ছিল না। পরে একজন রিকশাচালক অনেক অনুরোধের পর ইয়াসিনের কাছে নিয়ে যায়। তাকে মুগদা হাসপাতালে ভর্তি করি। টাকা নাই, কারে বলব, কী করব বুঝে উঠতে পারি নাই। পাঁচ দিন পর ইয়াসিন মারা যায়। লাশ গ্রামের বাড়িতে আনতেও অনেক কষ্ট করতে হইছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের কোনো দোষ ছিল না। সে কোনো দল করত না। কাজ করত, যা আয় হতো তাই দিয়ে সংসার চলত। আমাকে কাজ করে খাওয়ানোর মতো এখন কেউ আর নাই।’ ইয়াসিনের নানি মোমেনা বেগম জানান, ইয়াসিন ছোটবেলায় আমাদের কাছেই থাকত। অভাবের সংসারে লেখাপড়া করতে পারেনি। ওর মা ঢাকায় পরের বাড়িতে কাজ করে। ইয়াসিন মারা যাওয়ার পর লাশ নিয়ে গ্রামে আসবে সেই সাধ্যও ছিল না। আমরাই ধারকর্জ চাঁদা তুলে টাকা পাঠাই।

সর্বশেষ খবর