শিরোনাম
সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

আমার ছেলেকে কারা মারল কার কাছে বিচার দিমু

আবদুল্লাহপুর এলাকায় গাড়ি থেকে নেমে অন্য গাড়িতে ওঠার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। হঠাৎ পরপর দুটি গুলি তার পিঠে ও পেটে লাগলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন জাকির হোসেন...

গাজীপুর প্রতিনিধি

আমার ছেলেকে কারা মারল কার কাছে বিচার দিমু

‘রাজধানীতে  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে সংঘাতের খবর পেয়ে জাকিরকে ফোন দিয়েছিলেন তার মা মোমেনা বেগম। ছেলেকে এ অবস্থায় বাইরে যেতে মানা করেন। মায়ের সঙ্গে কথা বলা অবস্থায়ই একপর্যায়ে বিকট আওয়াজ হয়। এরপর আর জাকিরের কোনো কথা শুনতে পাননি তিনি’, কথাগুলো বলছিলেন গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণকারী জাকির হোসেনের বাবা আবদুস সামাদ। জাকিরের বাবা আবদুস সামাদের আক্ষেপ, ‘আমার ছেলেকে কারা মারল? কার কাছে বিচার দিমু। কিছুই বলার নাই আমার। আমাদের তো সব শেষ হয়ে গেল’। গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বারিষাব ইউনিয়নের চরদুর্লভখা গ্রামের জাকির হোসেন (৩৮)। গত ১৯ জুলাই বিকালে রাজধানীর আবদুল্লাহপুর এলাকায় পুলিশের গুলিতে আহত হন বলে তার পরিবারের সদস্যরা জানান। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২১ জুলাই ভোর ৪টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তিনি চরদুর্লভখা গ্রামের দরিদ্র কৃষক আবদুস সামাদের বড় ছেলে। গাজীপুর সদর উপজেলার ভীমবাজার এলাকায় একটি কারখানায় উৎপাদন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতেন। নিহত জাকির হোসেনের পিতা আবদুস সামাদ জানান, ভিটেমাটিসহ সর্বসাকল্যে দেড় বিঘার মতো জমি রয়েছে তার। অভাবের সংসারে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটছিল তার। জাকির ভাইবোনদের মধ্যে সবার বড়। পিতার কষ্ট লাঘব করতে এসএসসি পাসের পর ২০০৩ সালে তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন জাকির হোসেন। কঠোর পরিশ্রম আর মেধার পরিচয় দিয়ে কয়েক বছর আগে সহকারী প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে পদোন্নতি পান গাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়াল মির্জাপুর এলাকায় একটি তৈরি পোশাক কারখানায়। ছয় মাস আগে এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে ছোট পরিসরে কাজী ভিআইপি গার্মেন্টস নামে একটি মিনি পোশাক তৈরির কারখানা গড়ে তোলেন তিনি। জাকিরের পিতা জানান, ঘটনার দিন দুপুরে কারখানার জন্য গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকা থেকে জরুরি কিছু মালামাল কেনেন। পরে একজন বায়ারের ফোন পেয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে আবদুল্লাহপুর এলাকায় গিয়ে গাড়ি থেকে নেমে অন্য গাড়িতে ওঠার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। সে সময় সেখানে পুলিশ ও জনতার ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলাকালে হঠাৎ পরপর দুটি গুলি এসে তার পিঠে ও পেটে লাগলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন জাকির হোসেন।  আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে উত্তরার বাংলাদেশ আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরে ২১ জুলাই রবিবার রাত ১০টার দিকে জানাজা শেষে তার লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

সর্বশেষ খবর