শিরোনাম
সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

মৃত্যুসনদে লেখা মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন

শেষ ফোন কলে বলেছিলেন চিন্তা না করতে, অফিস বন্ধ করে বাসায় ফিরবেন

ফরিদপুর প্রতিনিধি

মৃত্যুসনদে লেখা মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন

উপার্জনক্ষম বাবা মারা গেলেন, এখন আমার ও বোনের পড়ালেখা চলবে কীভাবে। তাছাড়া সংসারই বা চলবে কীভাবে, কার কাছে বলব এসব কথা, কেউ কি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন আমাদের পরিবারটিকে বেঁচে থাকার জন্য- এভাবেই একটানা কথাগুলো বলে গেলেন গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম সেতুর একমাত্র ছেলে আলভী বিন ইসলাম। তিনি জানান, যত রাতই হোক, বাবা না আসা পর্যন্ত খেতেন না বোন উমাইয়া ইসলাম (১৯)। সেই বাবা ঢাকার মিরপুর-১০ নম্বরে গুলিতে মারা যান। বাবার এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা। নিহত কামরুল ইসলামের বাড়ি ফরিদপুর শহরতলির রঘুনন্দনপুর হাউজিং এস্টেটে। তবে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ঢাকার মিরপুর-১১ নম্বরে থাকতেন। ৪ আগস্ট রাতেই কামরুল ইসলামের লাশ ফরিদপুরে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। পরদিন বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুর শহরের আলীপুর পৌর কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। কামরুল ইসলাম ঢাকায় কসমেটিকসের ব্যবসা করতেন। তার অফিস ছিল মিরপুর-১০ নম্বরে। তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। কামরুল ইসলামের স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, ৪ আগস্ট দুপুরে নামাজ পড়তে যান তার স্বামী। নামাজ শেষে তিনি কল করে বলেন, তার এখানে খুব গণ্ডগোল হচ্ছে। অফিসে দুজন কর্মচারী আছে। তাদের বিদায় দিয়ে অফিস বন্ধ করে তিনি বাসায় ফিরবেন। চিন্তা না করতে বলেন। কামরুল ইসলামের ছেলে আলভী বিন ইসলাম (২৩) বলেন, ৪ আগস্ট অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলেও তার বাবা বাসায় ফেরেননি। তখন তিনি বারবার বাবার নম্বরে কল দিতে থাকেন। অনেকক্ষণ পর একজন কলটি ধরে বলেন, ফোনটি যার, তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাকে মিরপুরের আল-হেলাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে তিনি ও তার স্বজনরা জানতে পারেন, ওই হাসপাতাল থেকে তার বাবাকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এই হাসপাতালে তাকে পাওয়া যায়নি। ঢাকার নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে গিয়ে বাবাকে খুঁজে পান তিনি। হাসপাতালের মৃত্যু সনদে বলা হয়, ‘মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।’ কামরুল ইসলামের ছেলে আলভী বিন ইসলাম একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করছেন। মেয়ে উমাইয়া এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। কামরুল ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাকে হারিয়ে দিশাহারা পরিবারের সদস্যরা।

সর্বশেষ খবর