৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০৭:২৬

শঙ্কা উত্তেজনার ভোট উৎসব আজ

গোলাম রাব্বানী

শঙ্কা উত্তেজনার ভোট উৎসব আজ

রাজধানীতে নির্বাচন কমিশন ভবনের সামনে গতকাল কড়া প্রহরা (বামে)। ব্যালট পেপার সরবরাহে ব্যস্ত কর্মীরা-রোহেত রাজীব

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট উৎসব আজ। শঙ্কা ও উত্তেজনা থাকলেও এ উৎসব পালনে প্রস্তুত প্রার্থী ও ভোটাররা। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে ২৯৯ আসনে। ব্যালট পেপারসহ প্রয়োজনীয় নির্বাচনসামগ্রী ভোট কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে। এবার ৬টি আসনে ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। বাকি ২৯৩ আসনে সনাতন পদ্ধতির ব্যালটে ভোট নেওয়া হবে।

ভোটকে ঘিরে দেশজুড়েই টানটান উত্তেজনা আছে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট আয়োজনে সব প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। অবাধ-সুষ্ঠু ভোট গ্রহণে সবকিছু কঠোরভাবে মনিটরিং করছে নির্বাচন কমিশন। এজন্য ইসিতে নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। আজ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

নির্বাচন কেন্দ্রে সহিংসতা ও অনিয়ম কঠোরভাবে দমনে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। গতকাল বিকালে নির্বাচনের সর্বশেষ প্রস্তুতি জানাতে নির্বাচন কমিশন ভবনে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে তিনি পুলিশকে এ নির্দেশ দেন। নির্বাচনী প্রতিযোগিতা যেন সহিংসতায় রূপ না নেয় সেজন্য অংশগ্রহণকারী দল ও প্রার্থীদের দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেন, এর মধ্যে কিছু নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত হয়েছে। এসব ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রয়েছে নিবন্ধিত ৩৯ দল। ভোটের লড়াইয়ে আছেন ২৯৯ নির্বাচনী এলাকায় ১ হাজার ৮৬১ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ১ হাজার ৭৩৩ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থী ১২৮ জন। প্রার্র্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ২৬০ (নৌকা ২৭২), বিএনপির ২১৯ (ধানের শীষ ২৮২), জাতীয় পার্টি ১৭৫ (মহাজোট ২৫) এবং নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী ২৯৮ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের। অধিকাংশ নিবন্ধিত দলের বর্জন-সহিংসতার মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার পাঁচ বছর পর এবারের নির্বাচনে সব দলকেই পাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

১০ কোটি ৪২ লাখ ভোটারের এ নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। এবারে ভোট কেন্দ্রের ভিতরে মোবাইল ফোন ব্যবহারেও নিয়ন্ত্রণারোপ করা হয়েছে। শুধু কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও কেন্দ্রের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশের ইনচার্জ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। কেউ ভোট দিতে মোবাইল ফোন নিয়ে গেলেও তা বন্ধ করে যেতে হবে। ঝুঁর্কিপূর্ণ ভোট কেন্দ্রে মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে চেকিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হবে। এ ছাড়া ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও মাঠে রয়েছেন। ভোটের পরদিন পর্যন্ত তারা থাকবেন।সব দলের সমান সুযোগ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, হামলা-সংঘাতের মধ্যে এ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুক্রবার সকাল ৮টায় শেষ হয়।

প্রতীক বরাদ্দের পর ১০ ডিসেম্বর সারা দেশে আনুষ্ঠানিক ভোটের প্রচার শুরু হয়েছিল। বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটেছেন প্রার্থীরা। মিছিলে মিছিলে মুখরিত ছিল গ্রাম-গঞ্জ-নগর-মহানগর-হাটবাজার-অলি-গলি রাজপথ। উৎসবমুখর ভোটের প্রত্যাশা প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার। ভোটের প্রচার শেষে রাজনৈতিক দল, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও সমর্থকদের কোনো ধরনের দ্বন্দ্বে না জড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ‘সংখ্যালঘু’ সম্প্রদায়সহ সব ভোটারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সবাইকে নির্ভয়ে কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে সিইসি বলেন, ব্যাপকসংখ্যক দল ও সর্বাধিক প্রার্থী এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। উৎসবমুখর ভোট নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৭ লাখের মতো সদস্য, ৭ লাখের মতো ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা এবং সাংবাদিক-পর্যবেক্ষক মিলিয়ে ১৫ লাখ লোক নির্বাচনী কাজে সম্পৃক্ত হয়েছেন বলে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন।

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর