শিরোনাম
৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১৭:২৮
বিজিবিসহ আহত ১২

রাঙামাটিতে ভোটগ্রহণ ছিল শান্তিপূর্ণ, বিচ্ছিন্ন ঘটনায় নিহত ১

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

রাঙামাটিতে ভোটগ্রহণ ছিল শান্তিপূর্ণ, বিচ্ছিন্ন ঘটনায় নিহত ১

রাঙামাটিতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিচ্ছিন্ন ঘটনায় একজন নিহত ও বিজিবি সদস্যসহ ১২জন আহত হয়েছে। নিহতের নাম মো. বাছির উদ্দিন (৩৫)। তিনি কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। 

রবিবার সকালে উপজেলার ইউনিয়নের রাঙ্গিপাড়া এলাকায় এঘটনা ঘটে। এছাড়া বাঘাইছড়িতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে গেছে তিন যুবককে। অপহৃতরা হলেন নিখিল চাকমা (৩৫), শিশির চন্দ্র চাকমা (৩০) ও সাধণ চাকমা (২৫)। রবিবার দুপুরে বাঘাইছড়ি উপজেলার ৭নং ওয়ার্ডে এঘটনা ঘটে। এমএন লারমা সংস্কারপন্থী বাঘাইছড়ি উপজেলা থানার সংগঠনিক সম্পাদক জসি চাকমা এই ঘটনার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি জেএসএসকে দায়ী করেন।

এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বাঘাইছড়ি উপজেলা থানার কর্মকর্তা এম এ মনঞ্জু বলেন, অপহৃরণে বিষয়টি শুনেছি । তবে থানায় এখনো পর্যন্ত কোন অভিযোগ অসেনি। তবে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। বর্তমান বাঘাইছড়ির পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রবিবার সকাল ১১টার দিকে কাউখালী উপজেলার ইউনিয়নের রাঙ্গিপাড়া এলাকায় নৌকা ও ধানের শীষের সমর্থর মধ্যে হঠাৎ কথা কাটাকাটি হয়।  এ ঘটনায় উভয় গ্রুপের মধ্যে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। সংর্ঘষে ঘটনাস্থলে নিহত হয় বাসির উদ্দীন নামে ওই ইউনিয়নের যুবলীগের সাধারন সম্পাদক। এসময় আহত হয় উভয় পক্ষের প্রায় ১২ জন নেতাকর্মী। তবে খবর পেয়ে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে আইন শৃঙ্খালাবাহিনী। আহতরা কাউখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
 
এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কাউখালী থানার কর্মখর্তা মো. মঞ্জুর আলম জানান, ভোটগ্রহণের আগে দু’দলের সংঘর্ষে এক যুবলীগ নেতার মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত আছে। 

বাঘাইছড়িতেও আওয়ামী লীগ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিকির নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বাঘাইছড়ি উপজেলার মো. আলমগীর নামে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এক সৈনিক মারাত্মক আহত হয়। তবে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা। তবুও ওই উপজেলায় দিনব্যাপী ছিল চাপা আতঙ্ক।  থমথমে পরিস্থিতির মধ্যেও ভোট প্রয়োগ করে ভোটাররা।

এছাড়া রাঙামাটি সদর বাঘাইছড়ি, কাপ্তাই, রাজস্থলী উপজেলায়ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির স্বতন্ত্র প্রার্থী ঊষাতন তারুকদার। তিনি বলেন, বিভিন্ন উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তাদের ভোটারদের ভয় দেখিয়ে কেন্দ্র দখল করে নেয়। আর প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করে। 

তবে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগ প্রার্থী দীপংকর তালুকদার উল্টো অভিযোগ করে বলেন, দূর্গম এলাকাগুলোতে হুমকি দমকি দিয়ে জেএসএসের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন কেন্দ্র এলাকা নিজেদের জিম্মি নেয়। কেন্দ্র এলাকায় যেতে বাঁধা দেয় আওয়ামী লীগ ও সাধারণ ভোটারদের।

এব্যাপারে রাঙামাটি রাঙামাটি রিটানিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ জানান, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও রাঙামাটিতে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যেসব ঘটনা ঘটেছে তা কেন্দ্র থেকে দূরে। তাই এসব ঘটনায় ভোটারদের মধ্যে কোন প্রভাব পরেনি। সবাই উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট প্রয়োগ করেছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যারা সহিংসতার ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। 

অন্যদিকে, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া রাঙামাটিতে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। কিছুটা উদ্বেগ-উৎকন্ঠা থাকলেও ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ারমত। পাহাড়-বাঙালি নারী-পুরুষ মধ্যে ছিল অনেকটা ভোট দেওয়ার অনন্দ উচ্ছ্বাস। তবে রাঙামাটির দূর্গম উপজেলাগুলোতে ছিল আতঙ্ক। সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয় রাঙামাটি ১০টি উপজেলার ২০৩টি ভোট কেন্দ্রে। পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োগ করা হয় প্রতিটি কেন্দ্রে। তাই কেন্দ্রের ভিতরে কোনো রকম সহিসংতার ঘটনা না ঘটলেও বিভিন্ন এলাকায় দেখা দেয় উত্তেজনা।  তবুও শঙ্কা মাথায় নিয়ে ভোট দিতে আশে স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙালী ভোটাররা। সারিবদ্ধভাবে তীব্র শীত অপেক্ষা করে নবীন-প্রবীন ভোটররা ভির জমায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে। 

এছাড়া, রাঙামাটির বরকল, বিলাইছড়ি, বাঘাইছড়ি, লংগদু, জুরাছড়ি, নানিয়ারচর, কাপ্তাই উপজেলায়ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও জেএসএস কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটনার কোন প্রভাব পরেনি জেলার অন্যান্য ভোট কেন্দ্রগুলোতে। সাধারণ তরুন ভোটারও আনন্দ উচ্ছ্বাসের মধ্যে তাদের ভোট প্রয়োগ করতে হাজির হয়েছে ভোট কেন্দ্রে।

রাঙামাটি কোতয়ালী থানার কর্মকর্তা মো. জাহিদুল হক রনি জানান, শহর এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সাধারণ মানুষ তাদের ভোটারধীকার প্রয়োগ করছে। রাঙামাটিতে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার বাহিনী মাধ্যমে ব্যাপন নিরাপত্তা জোরদার করা রয়েছে। তাই কেউ নাশকতা করলে ছাড় পাবেনা। কঠোর অবস্থানে আছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।

প্রসঙ্গত, রাঙামাটির ১০টি উপজেলা মিলে একটি মাত্র আসন ২৯৯। পাহাড়ি এ অঞ্চলে রয়েছে ৪ লাখ ১৮ হাজার ২১৭ ভোটার। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২৬ হাজার ৫৩৬ ও নারী ভোটার ২ লাখ ১৫ হাজার ৩০৭। যার মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙালির সংমিশ্রণ। এবার নির্বাচনে রাঙামাটি আসনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন ছয়জন প্রার্থী। 

তারা হলেন আওয়ামী লীগের দীপংকর তালুকদার (নৌকা), বিএনপির মণিস্বপন দেওয়ান (ধানের শীষ) এবং জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান এমপি ঊষাতন তালুকদার (সিংহ), জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট পারভেজ তালুকদার (লাঙ্গল), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জুঁই চাকমা (কোদাল) এবং ইসলামি শাসন আন্দোলনের মো. জসিম (হাতপাখা)।


বিডি-প্রতিদিন/ আব্দুল্লাহ সিফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর