৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১৮:২৩

বগুড়ায় ভোটগ্রহণ শেষে চলছে গণনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

বগুড়ায় ভোটগ্রহণ শেষে চলছে গণনা

প্রতীকী ছবি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়ায় বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যে দিয়ে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। জেলার ৭টি সংসদীয় আসনের মধ্যে বেশিরভাগ আসনে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ হয়। তবে বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যে বগুড়ার কাহালু উপজেলায় ১ যুবলীগ নেতা নিহত এবং কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। 

এছাড়া রিবিবার দুপুরের দিকে জেলায় ৫ জন প্রার্থী অস্বচ্ছতার অভিযোগ করে ভোট থেকে সরে দাঁড়ান। এরমধ্যে নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক ও বগুড়া-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী মাহমুদুর রহমান মান্না পুনরায় তফশীল ঘোষণা করে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবী জানান।

জানা যায়, বগুড়া-৪ আসনের কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের বাগাইল গ্রামে ধানের শীষের কর্মীদের সাথে আওয়ামী লীগ কর্মীদের সংঘর্ষকালে ৩ নং ওয়ার্ড যুব লীগের সহ সভাপতি আজিজুর রহমান (৩০) নিহত হয়। তার পিতার নাম হায়দার আলী। এঘটনায় পাইকর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য ও স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল হুদা ডুয়েল গুরুত্বরও আহত হয়েছে।

বগুড়ার কাহালু থানার ওসি শওকত কবির ও পাইকর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিঠু চৌধুরী জানান, বিএনপি কর্মীদের হামলায় আজিজুল ইসলাম নিহত হয়েছে। কেন্দ্র দখলে বাধা দিতে গেলে এই ঘটনা ঘটে। আহত আজিজুল ইসলামকে হাসপাতালে নেয়ার সময় সে মারা যায়। এঘটনা ছাড়া এই আসনে সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট গ্রহণ হয়েছে। 

বগুড়া-১ আসনে মহাজোটের নৌকা প্রতিকের প্রার্থী আব্দুল মান্নানের পক্ষে ভোটারদের মাঝে জোয়ার দেখা গেছে। কয়েকটি ভোট কেন্দ্রে ভোটাররা মহাজোটের প্রার্থীকে জয়ী করতে ভোট কেন্দ্রে আসছেন বলে জানান। এই আসনে সকাল থেকে ভোটারদের দীর্ঘলাইন দেখা যায়। 

একই আসনে বিএনপির প্রার্থী কাজী রফিকুল ইসলাম জানান, সকালে তার এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ছিল। তারপরও কোন কোন স্থানে ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে দেওয়া হয়নি।
 
বগুড়া-২ আসনের শিবগঞ্জ উপজেলার বুড়িগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের পাশের বাজারে ধানের শীষের সমর্থকরা লাঙ্গল সমর্থকদের উপর হামলা করে। এই হামলায় বুড়িগঞ্জ ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেনসহ ৫ জন আহত হয়। 

সকাল সাড়ে আটটায় পিরব ইউনিয়নের বকঠোঁটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে লাইনে দাড়ানো নিযে গোলযোগ থামাতে গিয়ে পুলিশ ও আনসার দু’দফায় ২০ রাউন্ড ফাকা গুলি বর্ষণ করে। বেলা ১২টায় রায়নগর কেন্দ্র, সাড়ে ১২টায় মহাস্থান মাহীসওয়ার ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্র, বেলা পৌনে ১টায় মোকামতলা পাইলট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র, দুপুর ১টায় গনেশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, দুপুর সোয়া একটায় আলাদিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র এবং দেড়টায় বানাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে তেমন কোন ভোটারের উপস্থিতি দেখা যায় নি। 

বগুড়ার শিবগঞ্জ মোকামতলা পাইলট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা এসআই হাফিজার জানান, সকাল থেকে ভিড় ছিল। ধীরে ধীরে তা ফাঁকা হয়ে যায়। 

বগুড়ার শিবগঞ্জ থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, কয়েকটি কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কারণে কিছু রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়েছে। তবে কত গুলি তা বলতে পারেননি তিনি। তবে সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। 
 
বগুড়া-২ আসনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী মাহমুদুর রহমান মান্নার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও শিবগঞ্জ থানা বিএনপি সভাপতি মীর শাহে আলম বলেন, নজির বিহীন কারচুপি ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মানুষের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। ভোটের আগে থেকেই মামলা দিয়ে আমাদের ১১৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার মাঠ ফাঁকা করা হয়।
 
রবিবার দুপুরে বগুড়া শহরের হোটেল নাজগার্ডেনে প্রেস বিফ্রিং করে নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক ও বগুড়া-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ধানের শীষের সমর্থক ও ভোটারদের ভোট প্রদান করতে দেয়া হচ্ছে না। নির্বাচনের কোন পরিবেশ ছিল না। ভোটারদের উপর পুলিশ লাঠি চার্জ করেছে। সে কারণে পুনরায় তফশীল ঘোষণা করে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি জানান। তিনি বলেন এই পরিস্থিতিতে বগুড়া-২ শিবগঞ্জ আসন থেকে জয়লাভ করার কোন সম্ভাবনা দেখছেন না।

এসময় তার সাথে ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সদস্য আতিকুর রহমান, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের আহবায়ক নাজমুল হাসান, বগুড়া জেলা বিএনপির নেতা এ্যাড: আব্দুল বাছেদ প্রমুখ।

বগুড়া-২ আসনের রির্টানিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর কবির বলেন, ছোট খাটো দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্নভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি।

বগুড়া-৩ আসনে কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। শান্তিপূর্নভাবে ভোট গ্রহণ শেষে গননা চলছে। 

বগুড়া-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম ভোট বর্জন করে আবারও ভোট প্রদানের দাবি জানান। তিনি নানা অভিযোগ করেন। এই আসনে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যনীয়। আসনের বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী মোশারফ হোসেন জানান, সকাল থেকে ভোটাররা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট প্রদান করেছেন। 

বগুড়া-৫ আসনের বিএনপি দলীয় প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ অভিযোগ করেছেন, শেরপুর উপজেলার ১৭৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৬৫টি কেন্দ্রে তার সমর্থকরা ভোট দিতে পারেনি। ভোটাররা এসব কেন্দ্রে ভোট দিতে যান নি। তিনি ভোট বর্জন করেন নি। তবে তিনি জানান, ভোটাররা ভোট বর্জন করেছেন। 

অপরদিকে মহাজোটের নৌকা প্রতিকের প্রার্থী হাবিবর রহমান জানান, সকাল থেকে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট প্রদান করেছেন।

বগুড়া-৬ সদর আসনে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। একটানা ভোটগ্রহণ শেষে গণনা চলছে। এই আসনে প্রার্থী রয়েছে মহাজোটের লাঙ্গল প্রতিকে নুরুল ইসলাম ওমর ও ধানের শীষের প্রার্থী বিএনপির মহাসচীব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বগুড়া-৭ আসনের গাবতলী উপজেলার রানীরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম বাবলু (ট্রাক মার্কা) ও অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী ফেরদৌস আরা খান এর (ডাব মার্কা) কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এঘটনায় আনসার সদস্যরা কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। কেন্দ্রে এই ঘটনার সময় আধা ঘন্টা ভোট গ্রহণ স্থগিত হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা কেন্দ্রে পৌঁছে ভোট গ্রহণ শুরু করেন। 


বিডি-প্রতিদিন/ আব্দুল্লাহ সিফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর