৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১৬:৫৯

ছিটকে পড়লেন অলি-ইব্রাহিম-নোমান-খসরু-জাফরুল-মাহমুদুল

রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম:

ছিটকে পড়লেন অলি-ইব্রাহিম-নোমান-খসরু-জাফরুল-মাহমুদুল

ফাইল ছবি

চট্টগ্রামের আসনগুলোয় হেভিওয়েটে ধস হয়েছে বিএনপির। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রম এবং কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীকও ছিটকে পড়লেন যেন সংসদের সিঁড়ি থেকে। ঝরে পড়লেন চট্টগ্রাম বিএনপির শীর্ষ নেতা সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীও । টালমাটাল নির্বাচনি লড়াইয়ে সংসদের সিঁড়ি হারিয়ে ফেলেছেন জাপা (এরশাদ)-এর প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীও। রেজিস্ট্রিবিহীন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা আ ন ম শামসুল ইসলামও ডুবেছেন ধানের শীষেই। 

বিএনপি, এলডিপি, কল্যাণ পার্টি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের হেভিওয়েট নেতাদের কেন এমন করুণ পরাজয়? -এমন প্রশ্নে নানা জনের আছে নানা মত। ঐক্যফ্রন্ট বা বিএনপি ও মিত্র জোটের পক্ষে যত অভিযোগই করা হোক না কেন মাঠে আছে তীব্র ভিন্ন ভাষ্যও। মামলা গ্রেফতারসহ প্রতিকূল পরিবেশ তৈরির সরকার বিরোধী অভিযোগ আছে ঐক্যফ্রন্টের।
কিন্তু এতে তীব্র ভিন্নমত দিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জিয়াউর রহমানের গড়া বিএনপির স্মরণকালের দ্বৈত নেতৃত্বেই এই পরাজয়ের মূল কারণ। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম জিয়ার একক নেতৃত্বের বাইরে তার পুত্র বিদেশ বিভুঁয়ে থাকা তারেক রহমানের বিশেষ প্রভাব চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী আভ্যন্তরীণ বিভক্তি তীব্র করে তোলে। এর ফলে দ্বিধা সংশয় ও অবিশ্বাসে নাজুক বিএনপি মাঠছাড়া হয়ে পড়ে। কর্মীরা ঝুঁকি নিতে রাজি না হওয়ায় পোলিং এজেন্টও পাওয়া যায়নি। অনেক প্রার্থীও ভোট দিতেই যাননি। 
অপরদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা অন্য যে কোন বারের চেয়ে এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি সজাগ ছিলেন। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শৈখ হাসিনার ইমেজকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি সিংহভাগ প্রার্থীই নিজেদের অস্তিত্ব ও মর্যাদার প্রশ্নে নির্বাচনি জয়ের প্রশ্নে ছিলেন অদম্য। 
সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি জোটের 'দমন পীড়নসহ অন্য সব অভিযোগ' নাকচ করেই রাজনৈতিক তথ্যাভিজ্ঞরা বলছেন, এদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগই সবচেয়ে বেশি প্রতিকূল স্রোত মোকাবিলা করেছে। ৭৫-এর পর থেকে ২১বছর চরম দুঃসময়ে বিএনপির মত মাঠছাড়া দশা হয়নি আওয়ামী লীগের। মাঠের কর্মীরাই আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখে, সেরকম কর্মীবাহিনী নেই বিএনপির। যার ফলে নির্বাচনে বিজয় হাত এই বিএনপি জোটের।  
এর বাইরে চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জেলায় শীর্ষনেতাদের দীর্ঘকালীন বিরোধ, মনোনয়নের ক্ষেত্রে প্রথমে প্রতিটি আসনে গড়ে তিন/চারজন করে দলীয় প্রতীক দেয়ার কৌশল ও জোট শরিক দলগুলোর প্রার্থীদের মাঠের অবস্থা যাচাই না করে মনোনয়ন প্রদানে অসন্তুষ্ট কর্মীরা কাজ করেননি বিএনপির। 
অন্যদিকে, চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন দলের সর্বশক্তি কাজে লাগাতে ঐক্যের নৌকায় তোলেন আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব ক্ষোভ অসন্তোষ ও বঞ্চনায় অভিমানে দূরে থাকা সব নেতাকেই। মনোনয়ন না পেয়েও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আমিনুল ইসলামসহ অনেকেই কাজ করেন ব্যাপকভাবে।  
ফলে আওয়ামী লীগের দোর্দণ্ড সাংগঠনিক শক্তির মুখে দাঁড়াতেই পারেনি বিএনপি ও তার মিত্রজোট। চট্টগ্রামের সব আসনেই পরাজয় অনিবার্য হয় জোটটির। 
কেস স্টাডি (১): চট্টগ্রাম-১৪ চন্দনাইশ আসনটিতে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কর্নেল (অব.) অলি আহমদের (এলডিপি) প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে ঘিরে বিশেষ নজর ছিল সচেতনদের। লাঠি নিয়ে মাঠে থাকার জন্য সমর্থকদের দেয়া ফোনালাপ ফাঁস হলে বেকায়দায় পড়েন অলি। তার কর্মীদের বিরুদ্ধে ভোটের আগের রাত ও ভোট চলাকালে প্রকাশ্যেই চিকিৎসক নেতা মইজ্জুল আকবরের বাড়িতে আগুন দেয়া ও ভাংচুরের অভিযোগ ওঠে। শেষ পর্যন্ত অলি দাঁড়াতেই পারেননি ভোটের মাঠে। নৌকার 
নজরুল ইসলাম চৌধুরী ১লাখ ৮৯হাজার ৪৫৮ভোট পান। অলি আহমদ ছাতা প্রতীকে পান ২১হাজার ৯৪৭ভোট।
কেস স্টাডি (২):  চট্টগ্রাম-১১ বন্দর-পতেঙ্গা আসনে নৌকার এম এ লতিফ গড়ে তোলেন ৩৬ হাজার সদস্যের নারী সংগঠন 'স্বাধীনতা নারী শক্তি'র  সুসংগঠিত দুর্গ। এর বাইরে বছর জুড়েই ন্যায্য মূল্যের চাল ডাল তেল চিনিসহ খাদ্য যোগান দিয়ে তৈরি করেন এলাকাবাসীর প্রতিরোধ ব্যুহ। তা ভেদ করে সংসদের সিঁড়ি খুঁজেই পেলেন না বিএনপির 'স্মার্ট লিডার'  সাবেক মন্ত্রী  আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
অন্যান্য : হাটহাজারীতে জাপার ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের অদম্য অভিযাত্রার কাছে টিকতেই পারলেন না যেন মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মো ইব্রাহীম।
একইভাবে চট্টগ্রাম-১০ আসনে নৌকার ডা. আফসারুল আমিনের কাছে হেরে যান মাঠের রাজনীতির সবচে সিনিয়র বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমান। 
এদিকে, বাশখালিতে নৌকার মোস্তাফিজুর রহমান দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী ও জাপার মাহমুদুল। সাতকানিয়া-লোহাগাড়াতে নৌকার আবু রেজা মোহাম্মদ নিজামুদ্দিন নদভীর কাছে ধানের শীষে প্রতীকে হারলেন জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতা আ ন ম শামসুল ইসলাম। কোতোয়ালি-বাকলিয়ায় তারুণ্যের নতুন চমক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের কাছে হারলেন কারাগারে থাকা মহানগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন। সীতাকুণ্ডের নৌকার দিদারুল আলম হারালেন উত্তর জেলার শীর্ষ বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীকে।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর