রবিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
নির্বাচনী ব্যয়

৮১ লাখ টাকার প্রথম নির্বাচন থেকে ৭০০ কোটির একাদশ

সাইফ ইমন

একাদশ সংসদ নির্বাচনে পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলায় ৭০০ কোটি টাকার খাতওয়ারি বরাদ্দ অনুমোদন করেছে নির্বাচন কমিশন।  তবে ৭০০ কোটি টাকা বাজেট রাখা হলেও ব্যয় বেড়ে যেতে পারে। কারণ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার-ভিডিপি, কোস্টগার্ড, এপিবিএনসহ বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে। বিগত সময়ের তুলনায় বাড়তি লোকবল নিয়োগসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় বড় বাজেট চায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রাথমিক খসড়া বাজেটে আইনশৃঙ্খার জন্য ৪১০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ রাখা হলেও সেনাবাহিনীর বরাদ্দ ছাড়াই এই পরিমাণ অর্থ অন্যান্য বাহিনীর জন্য দিতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর জন্য আলাদাভাবে বাজেটের প্রয়োজন হবে। এদিকে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার-ভিডিপি, কোস্টগার্ডের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের অর্ধেক টাকা আগাম দিয়েছে কমিশন।

জানা গেছে, আগাম বরাদ্দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেওয়া হয়েছে আনসার ও ভিডিপির জন্য। এই বাহিনীর জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৬৩ কোটি ৮১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে খোরাকি বাবদ ১৪১ কোটি ৩৭ লাখ ৫১ হাজার টাকা, জ্বালানি বাবদ ৫ কোটি ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার টাকা, মনোহারি দ্রব্য বাবদ ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা এবং আপ্যায়ন ব্যয় ১২ কোটি ১৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। পুলিশের জন্য আগাম বরাদ্দ হয়েছে ৬৩ কোটি ২২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে খোরাকি ৩৬ কোটি ১৬ লাখ ৪৭ হাজার টাকা, জ্বালানি খাতে ১৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, মনোহারি দ্রব্য খাতে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা, আপ্যায়ন ব্যয় ৩ কোটি ১ লাখ ৩৭ হাজার ও যানবাহন (ভাড়া ও মেরামত) বাবদ ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জন্য আগাম ৩৩ কোটি দুই লাখ ৪৩ হাজার বরাদ্দের মধ্যে খোরাকি ১১ কোটি ৫০ লাখ ৬৫ হাজার, জ্বালানি ৩ কোটি ৩৫ লাখ, মনোহারি দ্রব্য ২১ লাখ ৩৩ হাজার, আপ্যায়ন ব্যয় ৩৩ লাখ ১৫ হাজার, যানবাহন ১৬ কোটি ৩ লাখ ৭১ হাজার ও ব্যবস্থাপনা ব্যয় বাবদ ১ কোটি ৫৮ লাখ ৫৭ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। র‌্যাবের জন্য আগাম ১০ কোটি ২০ লাখ ২৯ হাজার টাকা বরাদ্দের মধ্যে খোরাকি খাতে ৩ কোটি ৬৪ লাখ ৮৯ হাজার, জ্বালানি খাতে ৩ কোটি ২৪ লাখ ৬৪ হাজার, মনোহারি ৫০ লাখ, আপ্যায়ন ব্যয় ২৮ লাখ ৭৫ হাজার ও যানবাহন বাবদ ২ কোটি ৫২ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের জন্য আগাম ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বরাদ্দের মধ্যে খোরাকি খাতে ২৫ লাখ, জ্বালানি খাতে ৮৪ লাখ, মনোহারি ৩ লাখ, আপ্যায়ন ব্যয় ২ লাখ ও যানবাহন বাবদ ৪২ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এবারই প্রথমবারের মতো ভোটকেন্দ্রের পাহারায় নির্বাচনে নামানো হচ্ছে গ্রাম পুলিশদের (দফাদার ও চৌকিদার)। তারা মাঠে থাকবেন দুই দিন। ভোটের মাঠে দুই দিন দায়িত্ব পালন করবেন প্রায় ৪৫ হাজার গ্রাম পুলিশ। এ জন্য তাদের জনপ্রতি এক হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হবে।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ২৬৪ কোটি ৬৭ লাখ ৪৯ হাজার ৪৬৯ টাকা। এর মধ্যে নির্বাচন পরিচালনায় ৮১ কোটি ৫৫ লাখ ৪১ হাজার ৩৪১ টাকা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পেছনে ব্যয় হয় ১৮৩ কোটি ১২ লাখ ৮ হাজার ১২৮ টাকা। গত নির্বাচনে ১৪৭ আসনে ভোট হয়, ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন একক প্রার্থীরা। অর্ধেক এলাকায় ভোট করতে হওয়ায় বরাদ্দের তুলনায় খরচ অনেক কমে আসে। নবম সংসদ নির্বাচনে ১৬৫ কোটি ৫০ হাজার ৬৮৭ টাকা ব্যয় হয়; যাতে ভোটার ছিল ৮ কোটি ১০ লাখের বেশি। অষ্টম সংসদ নির্বাচনে মোট ব্যয় হয় ৭২ কোটি ৭১ লাখ ৩২ হাজার ২২০ টাকা; সপ্তম সংসদ নির্বাচনে পরিচালনা বাবদে ১১ কোটি ৪৭ লাখ ২২ হাজার ৩৪৭ টাকা; ষষ্ঠ জাতীয় নির্বাচনে মোট ৩৭ কোটি ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৩০ টাকা ব্যয় হয়। পঞ্চম সংসদে নির্বাচন পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা খাতে ব্যয় হয় ২৪ কোটি ৩৭ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৭ টাকা। চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে ছিল ৫ কোটি ১৬ লাখ  টাকা। দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় ব্যয় হয় ২ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী ব্যয় ছিল ৮১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর