৭ ডিসেম্বর, ২০২২ ০৯:৫২

রোনালদোর উত্তরসূরি কি পেয়ে গেল পর্তুগাল?

অনলাইন ডেস্ক

রোনালদোর উত্তরসূরি কি পেয়ে গেল পর্তুগাল?

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো (বামে) ও গনজালো রামোস

বিশ্বকাপের প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ, যা নকআউট হিসেবেই অধিক পরিচিত। হেরে গেলেই বাদ। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেও বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম মহাতারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে বাদ দিয়ে প্রথম একাদশ নামানোর সাহস দেখান পর্তুগালের কোচ ফার্নান্দো স্যান্তোস। রোনালদোর জায়গায় সান্তোস যাকে নামালেন তার নাম রামোস। সেই রামোসই করলেন বাজিমাত। যেন তিনি এলেন, দেখলেন আর জয় করলেন। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই অনবদ্য হ্যাটট্রিক রামোসের। শুধু তা-ই নয়, এবারের বিশ্বকাপের এটিই প্রথম হ্যাটট্রিক। শুরু থেকেই তার দাপটে কাঁপছিল সুইজারল্যান্ডের ডিফেন্স। আর শেষ পর্যন্ত ১-৬ গোলে খড়কুটোর মতোই উড়ে গেল সুইসরা। এর মধ্যে তিন গোলই ২১ বছরের রামোসের। ১৯৬২ সালে ফ্লোরিয়ান আলবার্টের পর কনিষ্ঠতম ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিকের নজির গড়লেন রামোস।

রামোস ছাড়াও বাকি তিন গোল করেছেন পেপে, রাফায়েল গুয়েরেরো এবং রাফায়েল লিয়াওর। এদিন পর্তুগালের ছয় গোল হলেও রোনালদোর ঝুলি শূন্য।

রামোসের এমন দাপট দেখানোর পর এখন চারিদিকে প্রশ্ন তাহলে রোনালদোর যুগ কি শেষের পথে? সিআরসেভেনের উত্তরসূরি কি পেয়ে গেল পর্তুগাল? আর প্রশ্ন উঠবেই না কেন! বিশ্বমঞ্চে নক আউট পর্বে ৫০০ মিনিটের বেশি খেলে একটাও গোল নেই রোনালদোর। সেখানে মাত্র ৭৩ মিনিটেই তিন গোল রামোসের। বিশ্বকাপে স্বপ্নের অভিষেক বেনফিকার ২১ বছরের স্ট্রাইকারের। ভবিষ্যতের তারকা হওয়ার সব রকম রসদ রয়েছে রামোসের। যে দাপটের সঙ্গে খেললেন, চলতি বিশ্বকাপে প্রথম একাদশে পর্তুগিজ সুপারস্টারের জায়গা পাওয়া নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে। একেই বলে বোধহয়, ‘কারও পৌষমাস তো কারও সর্বনাশ।’

এদিন রোনালদোকে ছাড়াই ভীষণ উচ্ছ্বল ছিল পর্তুগাল দল। আক্রমণের ঝড় তুলে একের পর এক গোল করতে থাকে। কোথাও এতটুকু রোনালদোর অভাব বোধ হয়নি। ৭৩ মিনিটে রামোসের পরিবর্তে রোনালদো মাঠেন যখন নামলেন, তখন ম্যাচ জয়ের পথে পর্তুগাল। ৫-১ এ এগিয়ে ছিল তারা। রোনালদো নামার পরে অবশ্য একটি গোল হয়েছে। আর সেই গোলটিও সিআরসেভেনের নয়, রাফায়েল লিয়াওর। বিশ্বকাপে প্রথমবার বসতে হল রোনালদোকে। তাতে আখেরে লাভ হয়েছে পর্তুগালসহ ফুটবল বিশ্বের। নতুন তারকার জন্ম হয়েছে। যাকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করতেই পারেন ফুটবলপ্রেমীরা।

ম্যাচের ১৭ মিনিটে পর্তুগালকে এগিয়ে দেন রামোস। সরু অ্যাঙ্গেল থেকে কোনাকুনি শটে নিখুঁত প্লেসিং। অসাধারণ গোল। বিশ্বকাপ অভিষেকেই প্রথম গোলে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। তবে এর পরেও চমক ছিল। ম্যাচের ৩৩ মিনিটে ২-০ করেন পেপে। ব্রুনো ফের্নান্দেজের কর্নার থেকে হেডে গোল করেন পেপে। পর্তুগালের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সী (৩৯) ফুটবলার হিসেবে গোল করার নজির গড়লেন তিনি। বিশ্বকাপের ইতিহাসে রজার মিলার পর দ্বিতীয় স্থানে পর্তুগিজ ডিফেন্ডার।

বিরতিতে ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল পর্তুগাল। দ্বিতীয়ার্ধে ঝড়ের গতিতে সুইজারল্যান্ডকে উড়িয়ে দেয় স্যান্তোসের দল। ম্যাচের ৫১ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় এবং দলের তৃতীয় গোল রামোসের। ডানদিক থেকে ক্রস করেন ডালোট। রামোসের ডান পায়ের শট গোলে ঢুকে যায়। ম্যাচের ৫৫ মিনিটে স্কোরশিটে নাম তোলেন রাফায়েল গুয়েরেরোও। অটাভিও, রামোস হয়ে বল পান পর্তুগিজ লেফট ব্যাক। টপ নেট ফিনিশ করেন। খেলার ৫৮ মিনিটে ব্যবধান কমান ম্যানুয়েল আকাঞ্জি। কিন্তু টগবগ করে ফুটতে থাকা জোয়াও ফেলিক্স, ব্রুনো ফের্নান্দেজ এবং সর্বোপরি গনজালো রামোসকে আটকায় এমন সাধ্য কার!

ম্যাচের ৬৭ মিনিটে হ্যাটট্রিক করেন রামোস। জোয়াও ফেলিক্সের পাস থেকে আগুয়ান সুইস কিপারকে টপকে বল গোলে রাখেন ম্যাচের নায়ক। ম্যাচের অন্তিমলগ্নে সুইজারল্যান্ডের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকেন রাফায়েল লিয়াও।

পর্তুগালের নামের পাশে এ দিন ছ’টা গোল। কিন্তু তার মধ্যে একটাও রোনালদোর নেই- শেষ কবে এ রকম হয়েছে, মনে করা কঠিন। অনেক ফুটবল বিশেষজ্ঞই বলতে শুরু করেছেন, পর্তুগালের রাজা খুব শিগগিরই নিজের রাজপাঠ হারাতে চলেছেন। আর সেই অশনিসঙ্কেত পাওয়াও গেল কাতার বিশ্বকাপের প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালের পর্তুগাল বনাম সুইজারল্যান্ড ম্যাচেই।

বিডি প্রতিদিন/কালাম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর