১৬ ডিসেম্বর, ২০২২ ২১:৪৭

‘সলতে পোড়ে মেসির ঘরে, তার আলোতে ভুবন ভরে’

নাজমুল হাসান

‘সলতে পোড়ে মেসির ঘরে, তার আলোতে ভুবন ভরে’

‘প্রেমের মরা জলে ডোবে না, তুমি সুজন দেইখা কইরো পিরিত মইলে যেন ভুলে না দরদী।’ ফুটবলের মহাতারকা লিওনেল মেসির প্রেমও তেমন, ঝড় তুফান যা কিছুই আসুক; জলে ডোবে না।

মাঠে যেমন বল খুঁজে নিয়ে গোল করতে ভুল করেন না মেসি জীবনের ময়দানেও তেমন ভুল করেনি আন্তোনেল্লা রোকুজ্জো জীবন সঙ্গী করে।

জীবনের পরতে পরতে মেসি যে ম্যাজিক বুনে যান, হয়ে ওঠেন মহা-জাদুকর। নতুন গল্পের পাতায় যে মেসি বিস্ময়ে ঠাসা এক চরিত্র। সেই মেসি ফুটবল মাঠে যেমন অনবদ্য, তেমন অনন্য জীবনেও। তাকেকে অনুপ্রেরণা মেনে আফগানিস্তান কিংবা ইরাকের যুদ্ধাহত ছেলেটা মেসি হতে চায়। রণক্লান্ত সিরিয়ার ছেলেটাও ভূমধ্যসাগরের লোনা জল ঠেলে পৌঁছে যেতে চায় মেসির কাছে।

মাঠের তারকা মেসিও সাধ্যমতো ভালোবাসার হাত বাড়ান এমন স্বপ্নাতুর শিশুদের দিকে। মাঠে ডেকে নিয়ে তাদের সাথে দেখা করেন। সবদিক বহাল তবিয়তে সামলে আলো জ্বালা মেসির পেছনেও আছেন একজন। তিনি রোকুজ্জো।

কোপার ফাইনালে যখন মেসি পেনাল্টি মিস করে বেদনায় ফুটবল থেকে বনবাসে যেতে চান তখনও রোকুজ্জো পাশে দাঁড়ান। আবার বার্সেলোনা ছাড়ার কঠিন মুহূর্তে মেসির চোখে যখন ঝর্না ঝড়ে তখনও রোজারিওর সেই মেয়েটা এসে দাঁড়ান মেসির পাশে।

বেদনা শুষে নিয়ে মেসিকে রোকুজ্জো দেন জ্বলে ওঠার অমীয় জ্বালানি। তার ফুয়েলেই রোজ মেসি হন ধ্রুবতারা। এলএম টেন নিজেও অকপটে এ কথা স্বীকার করেছেন। ঘরে শান্তি যে শ্রান্তি দূর করে পৌঁছে দিতে পারে আলোকবর্ষ দূরে থাকা লক্ষ্যের কাছে মেসি তার জ্বলন্ত প্রমাণ।

এবারের বিশ্বকাপে সৌদি আরবের কাছে হারের পর ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষণে মেসির পাশে ছিলেন রোকুজ্জো। তার ছোঁয়াতেই যে পরশপাথরে দেখা মেলে, দুয়ার খোলে সব সম্ভাবনার; মেসির তা ভালোভাবেই জানা। ’

তাইতো হারের পর ঘুরে দাঁড়িয়েই কাতারে রোকোজ্জুকে নিয়ে একটা দারুণ ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন মেসি। যদিও সেই ছবির কোনো ক্যাপশন ছিল না। তারপরও বুঝে নেওয়া যায়, ‘যে সলতে পোড়ে মেসির ঘরে, তার আলোতেই ভুবন ভরে।’

রোজারিওতে জন্ম নেওয়া রোকুজ্জোর সঙ্গে মেসির প্রথম দেখা ১৯৯৬ সালে। তার কাজিন ও ফুটবলার লুকাস স্কাগলিয়া মেসি শৈশবের বন্ধু। স্কাগলিয়ার মাধ্যমেই রোকুজ্জোর সঙ্গে পরিচয় ঘটে মেসির। ২০০৭ সালে রোকুজ্জোর খুব কাছের এক বন্ধু গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর তাকে মানসিকভাবে সমর্থন দিতে বার্সেলোনা থেকে আর্জেন্টিনায় ফিরে যান মেসি।

সেখান থেকে ফেরার পর প্রণয়ে জড়িয়ে পড়েন দুজন। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে এক সাক্ষাৎকারে মেসি প্রথম স্বীকার করেন, রোকুজ্জোর সঙ্গে তার প্রেমের। ২০১৭ সালে রোজারিওতে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন দুজন।

সেই পরিণয়ের পরিণতিতেই হয়তো এবার মেসির হাতে উঠতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ। কারণ, দুঃখের দিনে পাওয়া সাহস আর অনুপ্রেরণাই তো একদিন সাফল্য এনে দেয়। আর দুঃখের দরিয়া ঠেলে জীবনে যে জ্বালে সন্ধ্যা প্রদীপ, তার চেয়ে ভালো বন্ধু আর কেউইবা আছে। রোকুজ্জো তো মেসির সেই আঁধার রাতের চাঁদ, দিকহারা সমুদ্রে ধ্রুবতারা।

তাই তো মেসি বিশ্বকাপ জিতলে, জিতে যাবেন রোকুজ্জো। তাজমহলের চেয়েও বড় কীর্তি গড়বে প্রেম। হেলেনের দায়ও হয়তো মিটে যাবে। কারণ, ট্রয় ধ্বংসের দায় যেই প্রেমের কাঁধে চাপানো হয়; সেই প্রেমই তো করছে বিশ্ব জয়।

 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর