১৭ ডিসেম্বর, ২০২২ ১১:০৫

স্কালোনিকে তবুও ছোট করে দেখবে আর্জেন্টিনা?

অনলাইন ডেস্ক

স্কালোনিকে তবুও ছোট করে দেখবে আর্জেন্টিনা?

২০১৮ সালে রাশিয়ার বিশ্বকাপে বিপর্যয়, দলের দায়িত্ব পেলেন পুহাতোর ছোট্ট গ্রামের লিওনেল স্কালোনি। তবে স্কালোনিকে ভালোভাবে নিতে পারেনি অনেক আর্জেন্টাইন।

এমনকি দিয়াগো ম্যারাডোনাও এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন, করেছিলেন তীব্র সমালোচনা। কিন্তু স্কালোনি হাল ছাড়েননি নিন্দাকে তিনি পরিণত করেছেন অকুণ্ঠ প্রশংসায়। তার হাত ধরেই বিশ্বকাপে ৩৬ বছরের শিরোপা খরা কাটানো দুয়ারে আর্জেন্টিনা। আর একটা ম্যাচ জিতলেই স্কালোনি হবেন ইতিহাস।

তিন বছরে তিনটি ফাইনালে হার, ২০১৬ সালে কোপার ফাইনালে পেনাল্টি মিস করে জাতীয় দলকে বিদায় বলেন মেসি। সেই খবরে হতভম্ব হন স্কালোনি। মেসিকে ঘিরে থাকা প্রতিপক্ষের কয়েকজন খেলোয়াড়, সাবেক সতীর্থের এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে স্কালোনি লিখেছিলেন, ‘এই ছবিই সবকিছু বলে দিচ্ছে... যেও না, লিও।’

আর তাতেই মেসির মন গলে, তিনি সিদ্ধান্ত বদলে জাতীয় দলে ফেরেন।

কেবল আর্জেন্টিনা নয় লাতিন আমেরিকার ফুটবলের গল্পও বদলে দিয়েছেন স্কালোনি। 

২০১৮ সালের অগাস্টে আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ) যখন স্কালোনিকে অন্তর্বর্তীকালীন কোচের দায়িত্ব দেয়, তখন ফেডারেশনের যুব কার্যক্রমের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তখনকার ৪০ বছর বয়সী স্কালোনির পূর্বে প্রধান কোচ হিসেবে কাজের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না।

২০১৫ সালে পেশাদার ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার পরের বছর স্প্যানিশ ক্লাব সেভিয়ায় হোর্হে সাম্পাওলির সহকারী কোচ হিসেবে যোগ দেন স্কালোনি। পরের বছর সাম্পাওলি যখন আর্জেন্টিনায জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পান, স্কালোনিও চলে আসেন তার সঙ্গে।

২০১৮ বিশ্বকাপে ভরাডুবি হয় আর্জেন্টিনার, ফ্রান্সের কাছে ৪-৩ গোলে হেরে বিদায় নেয় শেষ ষোলো থেকে। ছাঁটাই করা হয় সাম্পাওলিকে।

এএফএ খুঁজতে থাকে নতুন কোচ। একে একে প্রস্তাব দেওয়া হয় দিয়েগো সিমেওনে, মার্সেলো গায়াদো ও মাউরিসিও পচেত্তিনোকে। রাজি হননি তারা কেউ। স্থায়ী কোচ পাওয়ার আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্বে স্কালোনিকে দিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তবে ফেডারেশনের ওই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট ছিল না অনেকেই। ম্যারাডোনা বলেছিলেন, ‘ট্রাফিকের দায়িত্ব দেওয়া হলেও সে ঠিকমতো দিক নির্দেশনা দিতে পারবে না, সে কিভাবে জাতীয় দল পরিচালনা করবে। আমরা কি সবাই পাগল হয়ে গেছি?’

তবে ধীরে ধীরে নিজেকে প্রমাণ করতে শুরু করলেন স্কালোনি। মেসিকে ছাড়াই দায়িত্বের প্রথম ছয় প্রীতি ম্যাচের চারটি জেতেন স্কালোনি। পরে পেয়ে যান স্থায়ী দায়িত্ব। মেসিকেও পেয়ে যান দলে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও দৃঢ় হয় দুজনের বন্ধন। মেসি আবার উপভোগ করতে শুরু করেন জাতীয় দলে খেলা। 

২০১৯ সালে কোপা আমেরিকার সেমি-ফাইনালে ব্রাজিলের কাছে হেরে যায় আর্জেন্টিনা। দুই বছর পর সেই ব্রাজিলকেই তাদের মাটিতে ফাইনালে হারিয়ে মহাদেশীয় টুর্নামেন্টটির শিরোপা ঘরে তোলে তারা। দেশের হয়ে মেসি পান প্রথম শিরোপার স্বাদ। কেটে যায় তাদের ২৮ বছরের শিরোপা খরা। মেসিও হয়ে যান অনেকটা ভারমুক্ত।

বছর না ঘুরতেই তারা ‘ফিনালিস্সিমা’ নামে আরেকটি ট্রফির স্বাদ পায় ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে হারিয়ে। তিন বছরের বেশি সময়ে টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে দলটি পা রাখে কাতারে। প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে হারে বড় ধাক্কা লাগে। তবে সেটিই আরও শক্তিশালী করে তোলে দলকে। এরপর টানা পাঁচ জয়ে উঠে আসে ফাইনালে।

সেমি-ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে ৩-০ গোলে হারানোর পর আবেগ ধরে রাখতে পারেননি স্কালোনি। তার চোখে দেখা যায় জল। তিনি বলেন, ‘আমি আবেগপ্রবণ না হওয়ার চেষ্টা করি, কিন্তু কাজটা কঠিন, কারণ আমি যে কোনো আর্জেন্টাইনের স্বপ্নের জায়গায় আছি। আমার দেশের প্রতিনিধিত্ব করা আবেগের বিষয়।’

আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে নিয়ে যাওয়া আবেগের চেয়েও বেশি কিছু। সৌদি আরবের বিপক্ষে হারের পর দলে পরিবর্তন আনেন স্কালোনি। তরুণ এনজো ফার্নান্দেস ও হুলিয়ান আলভারেসকে নিয়ে আসেন শুরুর একাদশে। তারপর থেকেই উজ্জ্বল তারা।

আর্জেন্টাইনদের কাছে স্কালোনিও এখন প্রিয়, ভালোবাসার মানুষ। ১৯৭৮ সালে সেসার লুইস মেনতি ও ১৯৮৬ সালে কার্লোস বিলার্দো কোচ হিসেবে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে ঠাঁই পেয়ে গেছেন দেশটির ইতিহাসে। সেই অর্জন থেকে স্কালোনি স্রেফ এক ধাপ দূরে।

এ যেন হাজার বছর পথ হাঁটার স্কালোনির দুদণ্ড শান্তির দেখা পাওয়া এবং সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতো সন্ধ্যা আসার অপেক্ষা।


বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর