১৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৬:৫৭

৩১ ফাইনালে মেসি : ক্লাবের রেকর্ড দুর্দান্ত, কিন্তু দেশের হয়ে?

অনলাইন ডেস্ক

৩১ ফাইনালে মেসি : ক্লাবের রেকর্ড দুর্দান্ত, কিন্তু দেশের হয়ে?

যাত্রাটা শুরুটা হয়েছিল ২০০৬ সালে। কিন্তু সেই বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন বারবার ভেঙে গেছে। মাঠ ছাড়তে হয়েছে চোখের জলে। কাতারে সেই স্বপ্নের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আর্জেন্টিনার প্রাণভোমরা লিওলেন মেসি।

রবিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা। রাতে যার বিপক্ষে মাঠে নামতে চলেছেন, সেই কিলিয়ান এমবাপ্পেকে এরই মধ্যে অনেকটাই উজাড় করে দিয়েছে ফুটবল। কিন্তু শূন্য থেকে গেছে মেসির হাত।

সাতটি ব্যালন ডি অর, অলিম্পিক্সে স্বর্ণ পদক। বার্সেলোনার হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়। ক্লাব বিশ্বকাপে সেরা হওয়ার ট্রফি...সবই পেয়েছেন মেসি। শুধুই অধরা থেকে গেছে বিশ্বকাপ।

মেসির প্রথম বিশ্বকাপ যাত্রা ২০০৬ সালে। হোসে পেকারম্যানের আর্জেন্টিনার হয়ে সার্বিয়া ও মন্টেনিগ্রোর বিরুদ্ধে বদলি হয়ে খেলতে নেমেছিলেন। প্রথম ম্যাচে গোলও করেছিলেন। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল আর্জেন্টিনাকে।

২০১০ সালের বিশ্বকাপের আগে অবশ্য নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছিলেন মেসি। সে বার আর্জেন্টিনার দায়িত্বে ছিলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। মেসিই ছিলেন তার দলের প্রধান ফুটবলার। কিন্তু সেই কোয়ার্টার ফাইনালেও জার্মানি-কাঁটায় স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল মেসিদের।

২০১৪ সালের বিশ্বকাপে মেসিকে কেন্দ্রে রেখে দল তৈরি করেছিলেন কোচ আলেহান্দ্রো সাবেয়া। সে বার গ্রুপ পর্যায়ে চারটি গোল করেছিলেন মেসি। কিন্তু ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ের গোলে জার্মানির কাছে হারতে হয়েছিল মেসিদের। বহু প্রতীক্ষিত ট্রফির কাছে গিয়ে ব্যর্থ হতে হয়েছিল তাকে।

২০১৮ সালেও ব্যর্থ হয়েছেন মেসি। কোনও রকমে গ্রুপ পর্ব টপকানোর পরে শেষ ষোলোর লড়াইয়ে ফ্রান্সের সামনে পড়েছিলেন তারা। এমবাপ্পে ঝড়ে তছনছ হয়ে গিয়েছিল আর্জেন্টিনার রক্ষণ। সে অর্থে গত বারের প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে হারের বদলা নেওয়ার সুযোগ আছে এ বারের ফাইনালে।

দেশের হয়ে ট্রফি না পাওয়ার যন্ত্রণা শুরু থেকেই তাড়া করেছে মেসিকে। তা সে বিশ্বকাপই হোক বা কোপা আমেরিকা। তিন-তিন বার কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠেও খালি হাতেই মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাকে।

২০০৭ সালে প্রথম বার কোপা আমেরিকার ফাইনাল খেলেন মেসি। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচে ৩ গোলে হেরেছিলেন নীল-সাদারা। ২০১৫ এবং ২০১৬ সালেও ফাইনালে ওঠে মেসির দল। দু’বারই প্রতিপক্ষ ছিল চিলি। দু’বারই পেনাল্টিতে হারতে হয়েছে আর্জেন্টিনাকে।

তবে শাপমোচন ঘটে সেই মারাকানায়, যেখানে ২০১৪ সালে স্বপ্নের দরজায় পৌঁছেও বিশ্বকাপ ছুঁতে পারেনি মেসি। সাত বছর পর ২০২১ সালে কোপা আমেরিকায় জয়ই মেসির প্রথম স্বপ্নপূরণ। ২৮ বছরের অপেক্ষার অবসান আর্জেন্টিনারও।

আর্জেন্টিনার জার্সিতে মেসির দ্বিতীয় ট্রফি জয় চলতি বছরের ফিনালিসিমায়। রক্ষণের দর্প চূর্ণ করে ইতালিকে ৩-০ গোলে হারিয়ে ম্যাচের নায়ক হন মেসি।

২০০৮ সালে নাইজেরিয়াকে হারিয়ে অলিম্পিক্সও জিতেছিলেন মেসিরা। সব মিলিয়ে আর্জেন্টিনার হয়ে মোট ৮টি ফাইনাল খেলেছেন মেসি। তার মধ্যে ৪টিতে জিতেছেন এবং ৪টিতে হেরেছেন।

দেশের হয়ে ট্রফি-ভাগ্য ততটা জোরদার না হলেও ক্লাব ফুটবলের হয়ে ফাইনালে মেসির ‘রেকর্ড’ আসমান ছুঁই ছুঁই।

বার্সেলোনা এবং পিএসজির জার্সিতে মোট ২৩টি ফাইনাল খেলেছেন মেসি। তার মধ্যে জিতেছেন ১৮টিতে। হেরেছেন ৫টিতে।

চার-চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ রয়েছে মেসির ঝুলিতে। রয়েছে চারটি ইউইএফএ সুপার কাপও। ১০টি কোপা দেল রে ফাইনাল খেলে ৭টিতে জিতেছেন মেসি। জিতেছেন একটি সুপার কোপাও।

বার্সেলোনাকে তিনটি ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ জিতিয়েছেন মেসি। পিএসজির জার্সি গায়ে এখনও পর্যন্ত একটিই ফাইনাল খেলেছেন। ট্রফি দেশঁ চ্যাম্পিয়ন্সে ন্যান্তেসকে ৪ গোলে হারায় মেসির দল।

গত ১৬ বছর ধরে ফুটবল দুনিয়াকে কার্যত শাসন করেছেন মেসি এবং পর্তুগালের ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। প্রায় সব ট্রফিই তাদের ঝুলিতে রয়েছে। বাদ থেকে গেছে শুধু বিশ্বকাপ। এ বছর কোয়ার্টার ফাইনালের গণ্ডি পেরোতে পারেননি রোনালদোরা। আর্জেন্টিনা পেরেছে। ফাইনালেও উঠেছে। এবার কি মেসির ভাগ্য সহায় দেবে? নাকি আরও এক বার ট্রফির পাশ দিয়ে খালি হাতেই চলে যেতে হবে তাকে? সেই দিকেই তাকিয়ে গোটা বিশ্ব।

সূত্র : আনন্দবাজার।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর