১১ জুন, ২০১৮ ০১:৪০

আর্জেন্টিনা ভক্ত চা দোকানদারের নীল-সাদা রঙের বাড়ি

দীপক দেবনাথ, কলকাতা:

আর্জেন্টিনা ভক্ত চা দোকানদারের নীল-সাদা রঙের বাড়ি

আর কয়েক দিন পর রাশিয়াতে শুরু হচ্ছে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল। আর এই প্রতিযোগিতায় সকলের নজরে থাকা দলগুলির মধ্যে অন্যতম আর্জেন্টিনার ফুটবল দল। এই দল নিয়ে মাতামাতি শুধু যে আর্জেন্টিনায় রয়েছে এমনটা নয়। এই দলের খেলার প্রভাব মনে দাগ কেটেছে দেশটি থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরের পশ্চিমবঙ্গের ইছাপুর নবাবগঞ্জ এলাকার শিবশঙ্কর পাত্রের পরিবারেও। 

শিবশঙ্কর পাত্র পেশায় চায়ের দোকানদার হলেও নেশায় তিনি একজন অন্ধ ফুটবল ভক্ত আরও একটু ভেঙে বললে তিনি আর্জেন্টিনা এবং সেই দলের নয়নের মণি লিওনেল মেসির ভক্ত।

একটা সময় নিজেও ফুটবল খেলতেন, এলাকায় নাম ডাকও ছিল যথেষ্ট। ফুটবল খেলার কারণে বিশ্ব ফুটবলের প্রতি ভালবাসাও ছিল অনেকটাই। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ এ আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের মেগাস্টার ফুটবলের রাজপুত্র ম্যারাডোনার খেলা দেখে ভালবাসায় পরে যান শিবু। তার পর থেকে তার হৃদয়ে স্থায়ী ভাবে জায়গা করে নেয় লাটিন আমেরিকার এই দেশটি।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে আর্জেন্টিনার ফুটবল এর প্রতি ভালবাসাও বেড়ে চলে। ২০০৯ সালে তিনি নিজের বাড়ির দোকান করে ফেলেন আর্জেন্টিনার জাতীয় পতাকার রঙের। এর পর থেকে বাড়ির প্রতিটি কোণা-ঘরের দেওয়াল থেকে শুরু করে দরজা, জানালা, রান্নাঘর, আলমারি, ষ্ট্যান্ডফ্যান, ঠাকুরের আসন এমনকি তার বাড়িতে থাকা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবিতেও পড়েছে আর্জেন্টিনার নীল-সাদা রঙের তুলির টান। সেইসঙ্গে ঘরের দেওয়াল আলমারি, রান্না ঘরের দরজা, বাঙ্কার সব জায়গায় রয়েছে মেসির ছবি।
 
উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার ইছাপুর রেল স্টেশনে নেমে শিবশঙ্করের বাড়ি খুঁজতে মোবাইলে জিপিএস’এর সহায়তা নেওয়ার দরকার নেই। বরং অল্পবয়সী থেকে বয়স্কদের সামনে ‘আর্জেন্টিনা চায়ের দোকান’ বললেই সেই ঠিকানা বলে দিতে পারলে তারাই বেশি খুশি হবে। 

প্রতি চার বছর পর বসে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর। আর তখন শিব শঙ্করও পাত্রের তিন তলা বাড়িতেও পড়ে নীল-সাদা রঙের প্রলেপ। 

শিব শঙ্কর জানান ‘আমি ধূমপান বা ড্রিঙ্ক করি না। আমার একটাই নেশা তা হল আর্জেন্টিনা ও লিওনেল মেসি। আমি খুব বেশি রোজগার করি না কিন্তু সেই রোজগারের কিছুটা অংশ জমিয়ে রেখে দলের প্রতি ভালবাসা থেকে এই কাজগুলি করার চেষ্টা করি’। 

তিনি তার এই ফুটবলের প্রতি ভালবাসায় সঙ্গে পেয়েছেন তার স্ত্রী স্বপ্না, মেয়ে নেহা (২০) ও ছেলে শুভম (১০)-কেও। গর্বের সাথেই শিব শঙ্কর জানায় ‘মেসি কি খায়, কোন গাড়ি চালায় সবটাই জানে তার সন্তানরা। মেসির খেলা হলে একটিও মিস করে না তারা, এমনকি পরীক্ষার সময় খেলা পড়লেও মোবাইলে তা দেখা চাই’। 

এলাকার আর্জেন্টিনা প্রেমীরা শিবশঙ্কর বাবুকে সামনে রেখে সবাই মিলে বানিয়েছে আর্জেন্টিনা ফ্যানস ক্লাব। যারা প্রতিবছর মেসির জন্মদিন পালন করে। তার সাথে এই সংস্থার তরফে রক্তদান শিবির ,থ্যালাসেমিয়া শিবির সহ বিভিন্ন সমাজ কল্যাণমূলক কাজও করা হয় ।

শিবশঙ্কর পাত্রের স্ত্রী স্বপ্না জানান ‘আমি বিয়ের পর এই বাড়িতে এসে দেখতাম খেলা হলে আমার স্বামী দেখে এবং বিশেষ করে আর্জেন্টিনার খেলা হলে সব কাজ বন্ধ করে টিভিতে খেলায় নজর রাখে তখন থেকেই আমিও খেলা দেখতে শুরু করি। আমিও এখন আর্জেন্টিনার ভক্ত। শুধু আমার স্বামীই নয়, আমরাও এখন আর্জেন্টিনা এবং মেসির অন্ধ ভক্ত হয়ে গেছি। মেসি ভালো খেললে আমরা আনন্দ পাই, আর খারাপ খেললে দু:খ।
তিনি আরও জানান ‘আমরা চাই এই বছর যেন আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জয়ী হয় এবং বিশ্ব সেরা ফুটবলার যেন মেসি-ই হয়’।

বিডি-প্রতিদিন/ ই-জাহান

সর্বশেষ খবর