৩০ জুন, ২০১৮ ০৮:১৯

আর্জেন্টিনা না ফ্রান্স

রাশেদুর রহমান, মস্কো থেকে

আর্জেন্টিনা না ফ্রান্স

জেগে উঠেছে আর্জেন্টিনা। ঘুমন্ত সিংহকে খোঁচা দিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। সেই সিংহ আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠতেই তীব্র হুঙ্কারে তাড়িয়ে নিয়ে চলল বনের সবাইকে। আর্জেন্টিনা যদি ঘুম থেকে জেগে ওঠা সিংহ হয়, ফ্রান্সও কম কীসে! ওরা যে আগে থেকেই জেগে ছিল! আজ বিশ্বকাপে নকআউট পর্বের প্রথম ম্যাচে সমর্থকরা দেখবেন দুই সিংহের লড়াই। কাজান এরিনায় মুখোমুখি হচ্ছে আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স।

লিওনেল মেসি শেষবারের মতো অনুশীলন সেরে নিলেন। প্রথম ১৫ মিনিট উন্মুক্ত। সেখানে প্রচণ্ড ভিড়। মস্কোর সময় সকাল ১০টায় অনুশীলন। ভক্তের দল বাড়ি ছেড়েছে সূর্যোদয় দেখতে দেখতে। মস্কোর অপর প্রান্ত থেকে ব্রনিতসিতে আসতে গেলে কম করেও দুই ঘণ্টা প্রয়োজন। অথচ এখানে কোনো যানজট নেই। মেট্রো ধরে প্রথমে কোটেলনিকি। তারপর মূল শহরের বাইরে বাসে করে আধা ঘণ্টা। তারপর হেঁটে আরও কয়েক কিলোমিটার। এতটা কষ্ট করেও মেসিদের অনুশীলন দেখতে লোকে ভিড় করে। তাও কেবল ১৫ মিনিটের জন্য! কিন্তু তিনি যে লিওনেল মেসি। তাকে এক পলক দেখতে তো ভিড় জমবেই। লিওনেল মেসিরা গতকাল আড়ালে-আবডালে গোপন প্রস্তুতি নিলেন। তাদের ওয়ার্মআপেই অবশ্য অনেক কিছু স্পষ্ট হয়ে গেল। লিওনেল মেসি হাসছেন। কখনো মাসকারেনো কখনো বানেগার সঙ্গে মজা করছেন। দৌড় দিয়ে শরীরটাকে গরম করে নিচ্ছেন। গোলবারের সামনে ফ্রাঙ্কোকে দাঁড় করিয়ে পেনাল্টি শুট নিচ্ছেন। মেসিদের এই অনুশীলনটা এরপর ভিন্ন মাত্রা পেল। সবাইকে বার করে দিয়ে গোপন অস্ত্র তৈরি করতে লাগলেন তারা। গোপন পরিকল্পনা। প্রতিপক্ষ যে ফ্রান্স!
বিশ্বকাপে কত দূর যেতে পারবে আর্জেন্টিনা তা বলা কঠিন। কিন্তু নকআউট পর্বের প্রথম রাউন্ডেই তো তারা একটা ফাইনাল খেলতে নামছে! ১৫ জুলাইয়ের ফাইনালে আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স তো মানানসই দুটি নামই ছিল! ওদিকে গতকাল সকালেই ফরাসিরা পৌঁছে গেছে কাজানে। স্থানীয় ক্লাব রুবিন কাজানের মাঠে গোপনে অনুশীলন করেছেন আঁতোয়ান গ্রিজম্যানরা। ফ্রান্স দলটাকে নিয়ে খুব আশাবাদী সমর্থকরা। জিদান যুগের পর বিশ্বকাপ জয়ের জন্য আরও একবার বুকভরা আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে তারা গ্রিজম্যানদের দিকে। এমবাপ্পে, গ্রিজম্যান, ডেম্বলে, গিরদ আরও কত কত তারকার দল এই ফ্রান্স। গ্রুপ পর্বের তিনটা ম্যাচেই নিজেদের প্রমাণ করেছে তারা। কাগজে-কলমে ফ্রান্সের গ্রুপটাই ছিল সবচেয়ে কঠিন। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে সবচেয়ে কাছাকাছি তিনটা দল খেলেছে এই গ্রুপে। ফ্রান্স, ডেনমার্ক ও পেরু। অস্ট্রেলিয়াও কি কম দুরন্ত ছিল!

ফ্রান্সের মতো দলকেও কাঁপিয়ে দিয়েছিল সকারুরা। ফ্রান্সকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখার কারণও তো আছে। ল্যাটিন দলগুলোর রেকর্ড ইউরোপের এই ফুটবলীয় সুপার পাওয়ারের বিপক্ষে মোটেও ভালো নয়। ল্যাটিনরা তো ফ্রান্সের জালে বলই ঢুকাতে পারছে না ১৯৮৬’র পর থেকে। সেবার ব্রাজিলের সারেসা গোল করেছিলেন। আর দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে ফ্রান্সকে বিশ্বকাপের মাঠে হারাতে পারছে না কোনো ল্যাটিন দলই। ফিফার দেওয়া এই তথ্য সত্যিই ভয়ঙ্কর আর্জেন্টাইন সমর্থকদের জন্য। তারপরও আশায় আছে আলবেসিলেস্তরা। আশায় আছে ফরাসিরাও। তাছাড়া আরও একটা পরিসংখ্যান স্বস্তি দিতে পারে ফ্রান্সকে। লিওনেল মেসি কখনই বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে গোল করতে পারেননি। কখনই যা করেননি মেসি তা করতে পারবেন না, এরই বা নিশ্চয়তা কী। এই পরিসংখ্যান তাই যতটা আশার, ততটা ভয়েরও! নকআউট পর্বের প্রথম ধাক্কাটা কে সামাল দিতে পারবে, এই প্রশ্নটা এখন মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের। ইন্টারনেটে এরই মধ্যে জুয়াড়িরা কোটি কোটি ডলার বাজি ধরেছে। স্থানীয়রাও বাজি ধরেছে দুই দলকে নিয়ে। তবে অর্থ নয়, মদ। আর্জেন্টিনা জিতলে কেউ তার বন্ধুদের মদ কিনে খাওয়াবে, অন্যদিকে ফ্রান্সের পক্ষেও বাজি ধরার লোক কম নয়।

বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন

সর্বশেষ খবর