রবিবার, ১৫ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

সোনার কাপের জন্য এত লড়াই

 ১৯৭০ সালের আগ পর্যন্ত ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ বিজয়ীদের দেওয়া হতো জুলে রিমে বা ভিক্টরি কাপ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফিফার তৃতীয় প্রেসিডেন্ট জুলে রিমের স্মরণেই এই ট্রফির নামকরণ করা হয়। ফ্রেঞ্চ ভাস্কর আবেল লেফলয়োরের ডিজাইনে ট্রফিতে প্রাচীন গ্রিক পুরাণের বিজয়ের দেবীকে চিত্রায়িত করা হয়েছিল। সোনায় মোড়ানো রুপা দিয়ে তৈরি ট্রফিটির ওজন ছিল ৩.৮ কেজি। মূর্তিটি লাপিস লাযুলির ভীতের ওপর দাঁড় করানো ছিল। তাই এই ট্রফি ‘সোনালি দেবী’ নামেও পরিচিত ছিল। কাপটির নিচের দিকের সোনালি ফলকের চারদিকে ১৯৩০ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত বিশ্বকাপজয়ী দেশগুলোর নাম খোদাই করা হয়েছিল। ১৯৭৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপের জন্য নতুন কাপের আয়োজন করা হয়। সেজন্য ১৯৭১ সালে সাত দেশ থেকে মোট ৫৩টি ডিজাইন উত্থাপন করা হয়। নির্বাচিত হয় সিলভিও গাজ্জানিগার একটি ডিজাইন। আগের ট্রফির চেয়ে এটি ছিল তুলনামূলকভাবে ভারী। ৫ কেজি ওজনের ১৮ ক্যারেট সোনা দিয়ে তৈরি ট্রফিটির মোট ওজন ছিল ৬.১৪২ কেজি। এর উচ্চতা ৩৬.৮ সেন্টিমিটার। ১৩ সেন্টিমিটার ব্যাসের ট্রফির ভীতটি দুই স্তরের ম্যালাসাইট বা অলঙ্কারে ব্যবহৃত সবুজ পাথর দিয়ে আবৃত। এই দুই স্তর সবুজ ফুটবল মাঠকে বোঝায়। কাপের উপরের দিকে দুটি মনুষ্য মূর্তি দেখা যায় যারা গোলাকার পৃথিবীকে ধরে রেখেছে। দুজন খেলোয়াড় তাদের বাহুগুলোকে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে বিজয় উল্লাস ও আনন্দঘন মুহূর্তকে চিত্রিত করে। উপরের গোলাকার বস্তুটি মহাদেশগুলোর ছবিকে প্রতিফলিত করে। গোলাকার বস্তুটি ফুটবলকেও সম্বোধন করে। দুই প্রতিবিম্বাকার খেলোয়াড়দের মধ্যের লাইনগুলো ক্রীড়াশক্তিকে প্রকাশ করে। লাইনগুলো ভীত থেকে শুরু হয়ে পুরো কাপটিতে আঁকাবাঁকা হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফির ভীতটি দুটি সবুজ ম্যালাসাইটের আবরণে আবদ্ধ। এই দুটি আবরণকে একটি সোনালি স্তর পৃথক করেছে। সোনালি লাইনে ইংরেজিতে ‘ঋওঋঅ ডঙজখউ ঈটচ’ কথাটি স্পষ্ট করে খোদাই করা আছে। পুরো ট্রফিটি একটি সোনালি  প্লেটের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। কাপের নিচের দিকে বিশ্বকাপ জেতা দেশগুলোর নাম তাদের নিজ দেশের ভাষায় খোদাই করা আছে। নামগুলো গোলাকার সারিতে লেখা আছে। ভবিষ্যৎ চ্যাম্পিয়নদের নামের জন্যও আলাদা জায়গা রয়েছে। ২০০৬ সালের আগ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন দেশের কাছে এই ট্রফিটি থাকত পরবর্তী বিশ্বকাপ মূল পর্বের ড্র না হওয়া পর্যন্ত। কিন্তু এখন আর এমনটি করা হয় না। বর্তমান ফিফার নিয়মানুযায়ী, প্রতি বিশ্বকাপের জয়ী দল একটি সোনার আবরণে মোড়ানো ব্রোঞ্জের রেপ্লিকা পুরস্কার হিসেবে পেয়ে থাকে। আসল ফুটবল ট্রফিটি ২০১৬ সাল থেকে সুইজারল্যান্ডের জুরিখের ফিফা ওয়ার্ল্ড ফুটবল মিউজিয়ামে প্রদর্শিত হয়ে থাকে। কোকাকোলার সৌজন্যে ট্রফিটি বিশ্ব পরিভ্রমণ করে থাকে। ২০০৬ সালে প্রথম বিশ্ব ট্যুরে বের হয় বিশ্বকাপ ট্রফি। ২০০৬ সালের জার্মানি বিশ্বকাপের আগে ট্রফিটি ৩ মাস ধরে ২৯টি দেশ ভ্রমণ করে। এরপর ২০১০ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের আগে আবার ভ্রমণে বের  হয়ে ৮৪টি দেশ ঘুরে। একই ধারাবাহিকতায় রাশিয়া বিশ্বকাপের আগে ২২ জানুয়ারি, ২০১৮-তে শুরু হওয়া বিশ্বকাপ ট্রফি ট্যুরে মোট ৫১টি দেশ ভ্রমণ করে। ভ্রমণ শেষে ট্রফিটি রাশিয়া পৌঁছায় ১ মে। এই যাত্রায় ৯টি স্বাগতিক শহরে এটি প্রদর্শিত হয়।

 

এক নজরে

>> ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফির প্রথম নাম ছিল জুলে রিমে বা ভিক্টরি কাপ। ওজন ছিল ৩.৮ কেজি।

>> ১৯৭৪ সাল থেকে ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ নামকরণ হয়।

>> ট্রফির ডিজাইন করেছেন সিলভিও গাজ্জানিগা।

>> ট্রফির মোট ওজন ৬.১৪২ কেজি। এতে ১৮ ক্যারেটের ৫ কেজি সোনা আছে।

>> দুই স্তরের ম্যালাসাইট দিয়ে তৈরি ট্রফির ভীতের ব্যাস ১৩ সেমি। এটি মূলত অলঙ্কারে ব্যবহৃত এক ধরনের সবুজ পাথর।

>> ট্রফিতে দুজন খেলোয়াড় তাদের বাহু ছড়িয়ে বিজয় উল্লাস করছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর